বিশ্বের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে শুধুমাত্র রাশিয়ার ভেতরে কাজ করবে – এমন এক ‘বিকল্প ইন্টারনেট’ চালু করার পরীক্ষা ‘সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
![](http://greenwatchbd.com/wp-content/uploads/2019/12/বিকল্প-ইন্টারনেট-পরীক্ষার-ফল-যাচ্ছে-রুশ-প্রেসিডেন্ট-পুতিনের-কাছে.-BBC-Bangla-300x169.jpg)
এটিকে বলা হচ্ছে ‘আনপ্লাগড ইন্টারনেট’।এই পরীক্ষার বিস্তারিত এখনো পরিষ্কার নয় – তবে দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এ পরীক্ষার সময় কোন ধরনের পরিবর্তন টের পাননি।
এখন এই পরীক্ষার ফল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
এখন বিভিন্ন দেশ সমুদ্রের তলদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া তারের মাধ্যমে বৈশ্বিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। যার বিভিন্ন জায়গায় গ্রন্থির মতো এক ধরনের সংযোগস্থল রয়েছে। সেখান থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ডাটা বা উপাত্ত স্থানান্তর হয়।
কিন্তু রাশিয়া যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে তাতে বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সাথে সেই সংযোগস্থলগুলোকে বন্ধ করে অথবা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশি ডাটার আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে রাশিয়া।
সেজন্যেই একটি ‘বিকল্প ও স্বতন্ত্র’ আভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে তাদের। এর মাধ্যমে দেশটির নাগরিকেরা কোন ধরনের ওয়েবসাইটে যেতে পারবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে রাশিয়া।
“সেজন্যে ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস’ এবং টেলিকম কোম্পানিগুলোকে দেশের সীমানার মধ্যে ইন্টারনেট পুনর্বিন্যাস করতে হবে।”, বলছিলেন যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কম্পিউটার প্রকৌশলী অ্যালান উডওয়ার্ড।
বিকল্প ইন্টারনেট তৈরি করতে হলে দেশের অভ্যন্তরে ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস’ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাপক সমন্বয় দরকার হবে। বরং কয়েকটি হাতে গোনা কোম্পানি এই নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত থাকলে বিষয়টি সহজ হবে।
![](http://greenwatchbd.com/wp-content/uploads/2019/12/সাবমেরিন-কেবল-স্থাপনের-কাজ-চলছে.-GETTY-IMAGES-via-BBC-300x169.jpg)
রাশিয়া চাইছে, তারা একটি নিজস্ব উইকিপিডিয়া তৈরি করবে, এবং ইতোমধ্যেই দেশটির পার্লামেন্ট এক আইন পাশ করেছে – যাতে যেসব স্মার্টফোনে রাশিয়ায় তৈরি সফটওয়ার আগে থেকে ইন্সটল করা নেই সেগুলোর বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা আছে।
একজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এসব নীতি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণে সরকারকে সহায়তা করতে পারে, তবে এতে যে তারা সফল হবেই এমন কোন কথা নেই।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাস্টিন শেরম্যান বিবিসিকে বলেন, “এর আগে এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের বার্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে দেশটিকে। তবে ঠিক কী ধরনের সফল পরীক্ষা দেশটি চালিয়েছে তার বিস্তারিত না আসা পর্যন্ত রাশিয়া কতদূর অগ্রসর হয়েছে সেটি বোঝা মুশকিল।”
অন্য কয়েকটি দেশ যা করছে
ইরানে দেশটির ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক’ বাইরে থেকে আসা সকল ‘ইন্টারনেট কনটেন্টের’ উপর নজরদারি করে, তথ্যের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করে।
এক্ষেত্রে নজরদারি পাশ কাটিয়ে কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য যে ‘ভিপিএন’ মানুষজন ব্যবহার করেন সেগুলো কাজ করবে না।
চীনে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাকে বলা হয় ‘দা গ্রেট ফায়ারওয়াল অফ চায়না’। সেখানে গুগল, ফেসবুক সহ বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায় না। এর ফলে দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো খুব লাভবান হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
অনেক বিশেষজ্ঞের ভাষায় বিশ্বের ইন্টারনেট ভেঙে ফেলতে চাইছে রাশিয়া। অধ্যাপক অ্যালান উডওয়ার্ড বলছেন, “দিনকে দিন অনেক কর্তৃত্ববাদী দেশ তাদের নাগরিকরা (ইন্টারনেটে) কী দেখে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। ইরান ও চীন যা ইতিমধ্যেই করছে।”
তিনি বলছেন, “এর অর্থ হচ্ছে নিজেদের দেশ সম্পর্কে কী ধরনের আলাপ হচ্ছে সেটি জনগণ জানতে পারবে না।” – BBC Bangla