ইসলামপুরকাণ্ড: অবশেষে সিআইডি তদন্ত

এক সমাজকর্মী ঘুরে এসে জানাচ্ছেন, একদিন নয়, দুদিন ছাত্র হাঙ্গামা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের ইসলামপুরে৷ গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় দিনে৷ সিবিআই তদন্ত দাবি করেছিল বিজেপি৷ তবে রাজ্য পুলিশের সিআইডিকে দেয়া হয়েছে সেই দায়িত্ব৷
প্রথমদিন সশস্ত্র, মারমুখী ছাত্রদের অবরোধ থেকে স্কুলের শিক্ষকদের উদ্ধার করতে পুলিশ পাঠাতে হয়েছিল৷ এবং দ্বিতীয়দিন ফের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে হাঙ্গামা, ভাঙচুর শুরু করায় পুলিশ গিয়েছিল৷ সেই সময়ই গুলি চলে এবং স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রসহ মোট দু’জন ছাত্র প্রাণ হারায়৷ এরই প্রতিবাদে সম্প্রতি বাংলা বনধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি৷ তাদের দাবি, নিহত দুজনই তাদের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ এবং বিজেপি জোর গলায় বলছে, সেদিন পুলিশই আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছিল৷ যেহেতু রাজ্য সরকার বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক৷ ওদিকে জেলা পুলিশ এবং রাজ্য সরকার শুরু থেকেই দাবি করছে, ইসলামপুরের ঘটনায় বিজেপির উসকানি এবং ভিন রাজ্য থেকে আসা দুষ্কৃতিদের হাত আছে৷ গুলি কে চালিয়েছিল, তা আদৌ স্পষ্ট নয়৷ তদন্তের ভার আপাতত রাজ্য পুলিশের সিআইডির হাতে৷

দিল্লির এক সংস্থা এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির এক হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে৷ অবশ্য এর জন্য ৭১০ কোটি টাকা দলের খরচ হয়েছে৷ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে বিজেপির আয় ৮১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে৷
এই ঘটনার পর ইসলামপুর অঞ্চলে তথ্য অনুসন্ধানের জন্যে যান সমাজকর্মী জিম নওয়াজ৷ তিনি ওই এলাকার যে ইতিহাস খুঁজে এনেছেন, তা এই চলতি হাঙ্গামার প্রেক্ষিতে খুব তাৎপর্যপূর্ণ৷ জিম নওয়াজ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘পণ্ডিতপোতা স্কুল যে গ্রামটায়, সেটা তো বাজার বলা হয়, বাজার এলাকা, সেই বাজার এলাকাটা তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালের পরে৷ ওখানে একটা ফাঁকা মাঠ ছিল৷ এবং ওই ফাঁকা মাঠটা, ওই জমিটা মুসলিমদের ছিল৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, একাত্তরে, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ সেখানে আসে৷ এবং বলা হয়, উত্তরবঙ্গের সবথেকে বড় শিবির যেটা তৈরি করা হয়েছিল, উদ্বাস্তু শিবির, সেটা ওই পণ্ডিতপোতাতেই৷ এখন যেটা বাজার বলা হয়৷ ওখানে সকলেই ওপার বাংলা থেকে আসা৷ ১৯৭১ সালে এসেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও থেকে গিয়েছে৷ এখনো প্রতি বছর পাঁচজন দশজন পনেরোজন করে আসছে৷ আশেপাশের গ্রামগুলি সবই মুসলিম অধ্যুষিত৷ আর আমার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের রিপোর্টে একটা বিষয় আমি বলেওছি যে, ১৯৫৩ সালে যে রি-অরগানাইজেশন কমিশন তৈরি হয়, তারা ১৯৫৫ সালে রেকমেন্ড করে, ইসলামপুর সাব ডিভিশন, যেটা বিহারের মধ্যে ছিল, সেটা বাংলার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার৷ এবং সেই কমিশনের সুপারিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল, যে নির্দিষ্ট একটি ভাষার ভিত্তিতে রিঅরগাইনাইজেশন কখনোই সম্ভব নয়৷ একটি ভাষাভাষী মানুষ অবশ্যই নিজেদের ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়বে৷ সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষা৷ স্বাভাবিকভাবে, ওখানকার আদি বাসিন্দারা, মুসলিম এবং অন্যান্যরা একটা অন্য ভাষায় কথা বলে৷ সেটাকে বলা হয় সূর্যপুরী৷
আর সেইসময় তারা লেখাপড়াটা করত হিন্দি এবং উর্দুতে৷ পরবর্তিতে তারা বাংলা শিখলেও, প্রবণতা হিন্দি-উর্দুর দিকেই ছিল৷ আর এই সুপারিশের কথা মাথায় রেখেই, তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির ওপর রাজ্য সরকারের তরফে হস্তক্ষেপ করা হয়নি৷ আগের সরকারের তরফেও নয়, বর্তমান সরকারের তরফেও নয়৷ সেই জন্য ইসলামপুরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে উর্দু অ্যাকাডেমি তৈরি করা হয়েছে৷ সূর্যপুরীর তো কোনো লিপি নেই৷ এটা আঞ্চলিক ভাষা৷ এ কারণে ওদের পড়াশোনার মাধ্যমটা মূলত উর্দু৷ কাজেই এখানে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই৷ কারণ এখানে মাধ্যমটাই উর্দু৷ মানে, বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে উর্দু মাধ্যমেও পড়ানো হতো৷”
বিহার সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রামে, যা মূলত মুসলিমপ্রধান এবং হিন্দু বাঙালি উদ্বাস্তুদের একটি বসতি আছে, সেখানে কে বা কারা এই সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন তুলছে, বা তুলতে পারে, কীই বা তাদের উদ্দেশ্য— এসবই এখন বড় প্রশ্ন৷
শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলনে নামার প্রসঙ্গে জিম নওয়াজের প্রশ্ন, “আমরা নিজেরা যখন স্কুল-কলেজে পড়েছি, আমাদের কারো কখনো কোনো অধিকার ছিল কি যে, স্কুলে কোন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ হবে, সে নিয়ে কোনো কথা বলার? যদিও স্কুল এবং জেলা শিক্ষা আধিকারিকের দপ্তরের নথিপত্র থেকে এটাও প্রমাণ হয়েছে যে, ভাষা শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছিল সব নিয়ম মেনেই এবং শিক্ষা দপ্তর ও স্কুল কর্তৃপক্ষের যৌথ সিদ্ধান্তে৷ সেখানে কী করে স্কুলের টিচার্স রুমে মুখে গামছা বাঁধা সশস্ত্র জনতা গিয়ে হাজির হলো এবং গালিগালাজ, মারধরের পর হুমকি দিয়ে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র লিখতে বাধ্য করা হলো, সেই প্রশ্নও উঠছে৷” -ডয়চে ভেলে বাংলা