কারা ‘হ্যাক’ করছেন নিজেদের শরীর, কেন?

প্রযুক্তিকে যারা আক্ষরিক অর্থেই নিজের শরীরের সঙ্গে আত্মস্থ করে নিতে চান, তাদেরই একদলকে এখন বলা হচ্ছে ‘বায়োহ্যাকার্স’।
এরকম নামকরণের কারণ, তারা নিজেদের শরীরের ‘বায়োলজি’ বা জীববিদ্যাকে ‘হ্যাক’ করে নিজেদের শরীর বা মস্তিষ্ক যাতে আরও ভালভাবে কাজ করতে পারে, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন।
তাদের কেউ হয়তো নিজেদের ত্বকের নিচে কোনও চিপ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, কেউ আবার মারাত্মক চরম কোনও ডায়েট বা খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে নিজেদের ডিএনএ পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

যেমন, ব্রিটিশ তরুণী র ব্রুকার্স এই প্রথমবারের মতো একজন বায়োহ্যাকার হতে চলেছেন।
তিনি নিজের হাতে চামড়ার নিচে একটি বিশেষ চিপ বসিয়ে নিচ্ছেন, যাতে শুধু হাত দিয়েই তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের গাড়ির লক খুলতে পারবেন।
সফল অপারেশনের পর ডাক্তার যখন তাকে বলছিলেন “এখন তুমি একজন সাইবর্গ বা বায়োহ্যাকার” – তখন র্যাবেনের খুশিও বাঁধ মানছিল না।
এই ধরনের অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি হয়তো আছে, তার পরেও বায়োহ্যাকিং কিন্তু ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
র-র সার্জেন বলছিলেন এই বায়োহ্যাকিংয়ের যে একটা আলাদা আকর্ষণ আছে তার টানেই আরও বেশি বেশি মানুষ এখন এটা করাতে চাইছেন। তারা চাইছেন নিজেদের জীবনকে সাইবর্গের পর্যায়ে ‘আপগ্রেড’ করে নিতে।
র নিজেও বলছিলেন তিনি সম্ভব হলে নিজের জীবনের সব প্রক্রিয়াকেই স্বয়ংক্রিয় করে নিতেন। আর এই বায়োহ্যাকিং সেই চেষ্টারই একটা অংশমাত্র।
র-র শরীরে যে চিপটা ঢোকানো হল সেটা আসলে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা সম্ভব যাতে যে কোনও ওয়েবসাইটের সঙ্গেই সেটাকে লিঙ্ক করা যায়।
ফলে হাতের ওপর নিজের মোবাইল ফোনটা রেখে র যখন নিজের এনএফসি ট্যাগ অ্যাকসেস করতে চাইলেন, অনায়াসেই সেটা কাজ করল।
রিচ লি-ও আর একজন বায়োহ্যাকার। তিনি এগুলো নিয়ে নিজের ওপরই দিনরাত নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান, এবং অতীতে সেরকম কতগুলো পরীক্ষা রীতিমত ব্যর্থও হয়েছে।
তিনি বলছিলেন, “নিজের হাতের দুটো আঙুলে আমি ম্যাগনেট বা চুম্বক বসিয়ে নিয়েছি, আর ডানদিকের কানের নিচে একটা হেডফোন ইমপ্ল্যান্ট করিয়েছি।”
“আসলে আমি এমন একটা দুনিয়ার জন্য লড়াই করছি যেখানে একজন তার নিজের জিন পরিবর্তন করতে পারবে, কিংবা যেভাবে শরীরে এখন ট্যাটু আঁকা যায় সেভাবেই জেনেটিক মডিফিকেশনও করা যাবে।”
“এটাকে বলা যেতে পারে একটা বায়োলজিক্যালি ফ্লুইড সমাজ, যেখানে এগুলোর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।”
রিচ লি এখন একটা বিল্ট-ইন ভাইব্রেটর তৈরি করার পেছনে মাথা ঘামাচ্ছেন, যেটা তিনি নিজের পুরুষাঙ্গের ঠিক ওপরে বসাতে চান।
তার কথায়, “আমরা যদি শরীরে ভাইব্রেটিং মোটর বসাতে পারি তাহলে একটু নিচের দিকেও কেন নয়, যাতে আমি নিজেকে একজন সেক্স সাইবর্গ বা ওই জাতীয় কিছু বানিয়ে তুলতে পারি?”
“হ্যাঁ, কাজটায় এখনও অনেক বাধা আছে – তবে আমরা লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি। আমার বাবা-মা আর বাচ্চাদেরও আমার এই কাজে পুরোপুরি সমর্থন আছে।”
“তবে কয়েকটা জিনিস মেনে নিতে হয়তো তাদেরও অসুবিধা হয় … কিন্তু আমি যেমন ওদের গলফ খেলা নিয়ে কিটকিট করি না, ওরাও তেমনি আমার বায়োহ্যাকিং নিয়ে কিটকিট করে না!”- বিবিসি