প্লাস্টিক রিসাইকেল দূষণ কতোটা কমাতে পারছে?

খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ, প্রসাধনী অথবা প্রযুক্তি পণ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ব্যবহার করছে প্লাস্টিক। এ কারণে সমুদ্র ও প্রকৃতি দূষণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্লাস্টিক। তবে প্লাস্টিক দূষণের হার কমাতে সচেতনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাপান।
শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে গৃহস্থালি প্রতিটি ক্ষেত্রে রিসাইকেলের ব্যাপারে বেশ তৎপর তারা।
রিসাইকেল বা গৃহস্থালির ফেলা দেয়া জিনিষকে কিভাবে পুনঃব্যবহারের উপযোগি করা যায় সেটার উদাহরণ পাওয়া যায় জাপানের নারী কিয়োকো কাওয়ামুরার ঘরে।

তার রান্নাঘরে পাশাপাশি কয়েকটি ঝুরিতে তিনি প্রতিদিনের ফেলা দেয়া কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাটারি ইত্যাদি আলাদা করে রাখেন।
ঝুরিতে ফেলার আগে ছোট বড় প্রতিটি বস্তু ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতেও ভোলেন না তিনি।
কিয়োকো কাওয়ামুরার এই পরিপাটি পদ্ধতি দেখলে মনে হয় তিনি হয়তো জাপানের রিসাইক্লিং আর্মির একজন সৈনিক। যিনি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে এই কাজ করে যান।
বিশ্বে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের শীর্ষে রয়েছে জাপান। এবং এটি সম্ভব হয়েছে মিসেস কাওয়ামুরার মতো এমন হাজারো দায়িত্বশীল মানুষের কারণে। যারা বিশ্বাস করেন, মানুষ চাইলেই প্রকৃতির দূষণ বন্ধ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “আমাদের শেখানো হয়েছে যেন আমরা পৃথিবীর জন্য ভাল কিছু করতে পারি। এজন্য আমরা আবর্জনা সংগ্রহের জায়গাটি পরিষ্কার রাখি। এবং সবাই ঠিক আবর্জনা ঠিক স্থানে ফেলছে কিনা সেটাও নজরে রাখি। যদি এই নিয়মের হেরফের হয় তাহলে আমরা ওই ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেই।”
জাপানে এ ধরণের মানুষের প্রয়োজনীয়তার অন্যতম কারণ হল, তারা জাতিগতভাবে প্রচুর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে।
বিস্কিট থেকে শুরু করে ফল, মিষ্টি বা সেদ্ধ কোন খাবার, প্রতিটি আলাদাভাবে প্লাস্টিকে মোড়ানো থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরে জাপানেই সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। এ কারণেই মিসেস কাওয়ামুরা রিসাইক্লিং নিয়ে এতোটা উদ্বিগ্ন থাকেন।
প্লাস্টিক বর্জ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউ জং সুর মতে, জাপান রিসাইক্লিংকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। একে রিসাইক্লিং প্রোপাগান্ডা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, জাপানের এই প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে আসলেও কি করা হয় সেটা অনেকেরই অজানা। তিনি বলেন,
“জাপানিরা এই রিসাইক্লিংয়ের প্রতি অতিরিক্ত সিরিয়াস। তাদের ধারণা, তারা তখনই ভাল মানুষ হবে যখন তারা বেশি বেশি রিসাইকেল করতে পারবে। আমি মনে করি, তাদের এমন ভাবাটাই ভুল”
জাপানের এই প্লাস্টিক বর্জ্যের একটি বড় অংশ এতদিন রিসাইক্লিংয়ের জন্য চীনে পাঠানো হতো। চলতি বছরের শুরুতে ৭০ শতাংশ বর্জ্য পাঠিয়ে দেয়া হয় সেখানে। শিল্প কারখানার মালিক সোগামিসানও তার প্রক্রিয়াজাত প্লাস্টিকের ৮০ শতাংশই পাঠিয়ে দিতেন চীনে।
পরে চীনা কর্তৃপক্ষ চলতি বছর হঠাত করেই এই প্লাস্টিক বর্জ্যের আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় তার কারখানার পাশে জমে ওঠে পাহাড় সমান প্লাস্টিক বর্জ্য।
তবে শিল্প কারখানার যে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো রয়েছে সেগুলোর রিসাইকেলের উদ্যোগ নিয়েছেন সোগামিসান।
এজন্য তার কারখানার শ্রমিকদের তীব্র শব্দের মধ্যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়।
সেখানে প্লাস্টিকগুলোকে গলিয়ে, কেটে টুকরো করে পরে চূর্ণ করা হয়। পরে তৈরি করা হয় নানা ধরণের প্লাস্টিক পণ্য।
তবে কারখানায় ব্যবহৃত প্লাস্টিকগুলো উন্নতমানের এবং পরিচ্ছন্ন হওয়ায় এগুলোকে সহজেই রিসাইকেল করা যায়।
যেটা কিনা গৃহস্থালির ফেলে দেয়া নিম্নমানের প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না। এ কারণেই এতদিন গৃহস্থালির প্লাস্টিক বর্জ্য চীনে পাঠিয়ে দেয়া হতো।
তবে চীন এখন সেইসব প্লাস্টিকের আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছে জাপানের রিসাইক্লিং অর্থনীতি।
মিস্টার সোগামিসান বলেন, “যখন প্লাস্টিক রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই সারা জাপান জুড়ে প্লাস্টিকের স্তূপ জমতে শুরু করে। এবং এই স্তূপ ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। যেটা আমাদের বড় ধরণের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
জাপান এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক দিয়ে কি করবে সে ব্যাপারে এখনো কোন সুরাহা করতে পারেনি।
বাস্তবতা হল, গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত এই প্লাস্টিকগুলো মূল্যমান খুবই কম।
এগুলো হয় পুড়িয়ে ফেলতে হবে নাহলে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। যেটা বেশ জটিল এবং ব্যয়বহুল।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্লাস্টিকগুলোর জায়গা হয় সমুদ্রে। – বিবিসি