ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮: ভারমুক্ত ক্রোয়েশিয়া নাকি দুর্বার ফ্রান্স?

প্রথমবার ফাইনালে আসা ক্রোয়েশিয়ার সাথে আগের পাঁচবারের দেখায় কখনো হারেনি ফ্রান্স। তাদের জয় তিনটি ও ড্র দুটি। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালে এসে কোন নতুন দল কখনো হারেনি।
১৯৯৮ সালে ফ্রান্স আর ২০১০ সালে স্পেন প্রথমবার ফাইনালে উঠেই শিরোপা জিতেছিল।
অন্যদিকে নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে এসে দ্বিতীয় শিরোপায় চোখ দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্সের।

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে পরিকল্পনামাফিক খেলছে ফ্রান্স। তাদের খেলার ধরণ ছিল আলাদা।
নিজেরা গোল দিয়ে প্রতিপক্ষকে শ্লথ করে দেয়ার কৌশল দিদিয়ের দেশমের দলের।
এই কৌশলে বাড়তি রঙ চড়ান পগবা, এমবাপে। এই দুজনের গতি, কাউন্টারে হিংস্র করে তোলে ফ্রান্সকে।
শুরু থেকেই জয় নির্ভর ফুটবল খেলার প্রচেষ্টা ছিল ফ্রান্সের।
শুধু নিজেরা গোল করে না, প্রতিপক্ষ আক্রমণভাগকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করে মাঠে নামে দ্য ব্লুরা।
যেমন বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচটিতে লুকাকুকে খোলসবন্দী রাখে ভারান, উমতিতিরা।
ব্লেইস মাতুইদি আর এনগোলো কান্তে মধ্যমাঠেই প্রতিপক্ষের বল নষ্ট করে দেয়। এটা মদ্রিচ, রাকিটিচরা কিভাবে সামাল দেয় সেটার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে আজকের ফল।
প্রথম পর্বে অস্ট্রেলিয়া ও পেরুর সাথে ফ্রান্সের জয়ের ধরণে অনেকেই ভাবেনি এতোদূর আসবে তারা। এরপর ডেনমার্কের সাথে বিশ্বকাপের একমাত্র গোলশূন্য ড্র নিয়েও সমালোচনা হয়।
তবে ফ্রান্স জীবনীশক্তি কুড়িয়েছে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এমবাপে, পগবার গতির কাছে ম্লান হয়েছেন লিওনেল মেসি, এদিন মেসিকে খেলতেই দেয়নি ফরাসি রক্ষণ।
উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামের বিপক্ষে ফ্রান্স আবারো ট্যাকটিকাল গেম প্লে করে।
গোল করে জমাট রক্ষণে ফিরে যায়। তবে ফ্রান্সের বড় দুর্বল জায়গা নাম্বার নাইন, যদিও অলিভিয়ের জিরুর গোলমুখে নিষ্প্রাণ থাকা তাদের এখনো ভোগায়নি।
উরুগুয়ের বিপক্ষে ভারানে গোল করেন, বেলজিয়ামের বিপক্ষে উমতিতি। দুই ডিফেন্ডারের গোলে পার পেলেও ফাইনালের মতো ম্যাচ আরো কঠিন হবে।
দুদলের মূল পার্থক্য হলো ট্যাকটিক্স ও নিবেদন।
ক্রোয়েশিয়ার দলটা লুকা মদ্রিচের সাথে সমানতালে দৌড়ায়, যিনি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব দৌড়েছেন।
মধ্যমাঠ ক্রোয়েশিয়ার বড় শক্তির জায়গা। মদ্রিচ, রাকিটিচ, পেরিসিচ।
আর ডিফেন্সিভ মিডে জোজোভিচ থাকায় অনেকটাই ভারসাম্য রক্ষা হয় এখানে।
লভরেন এই বিশ্বকাপ দারুণ কাটাচ্ছেন। লিভারপুলের এই ডিফেন্ডার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলেছেন, সেখানে দল হারলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে তিনি সফলভাবে সামলেছেন।
বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিকে পকেটবন্দী করেছেন লভরেন।
সময়ের দুই সেরা তারকাকে খেলতে না দেয়া কৃতিত্বের, তাই ফ্রান্সকে আজ তাকে হারাতে হবে।
ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণে নেতৃত্ব দেন মাঞ্জুকিচ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল দিয়ে তিনিও আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার ক্রোয়েশিয়ার নক আউট পর্বের ৩টি ম্যাচই অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে, তাই সেখানে চাপ নেয়ার অভ্যাস তাদের হয়ে গেছে।
আবার উল্টোদিকে ৩০ মিনিট করে বাড়তি অর্থাৎ ৯০ মিনিট বা একটি ম্যাচের সময় বাড়তি খেলায় ক্লান্তিও ভর করতে পারে।
তবে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার রোমাঞ্চ ক্লান্তিকে হারিয়ে দেবে।- বিবিসি