বাংলাদেশীরা উদ্যমশীল: করোনার পরাজয় সুনিশ্চিত

এম জাহিদুল হক
স্বভাবগতভাবেই বাংলাদেশীরা খুব পরিশ্রমী এবং উদ্যমী ৷ সাধারণ মানুষরা যে কোনো পরিস্থিতিতেই নিজে পরিশ্রম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহে সচেষ্ট ৷ বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন এর জন্য খেটে খাওয়া মানুষদের প্রায় সব কর্মস্থানই বন্ধ রয়েছে৷ অনেকেরই চাকুরী চলে গেছে ৷ ভবিষ্যতে আরো কত লোকের চাকুরী যাবে তা বিধাতাই জানেন, তবুও মনোবল হারায়নি তারা; যে যেভাবে পারছে একটা কিছু করতে চেষ্টা করছে। সেদিন জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছিলাম দেখলাম, রাস্তার ধরে ফুটপাথে বসে বেশ কয়েকজন মাস্ক, হ্যান্ডগ্ল্যাভস, ইত্যাদি বিক্রি করছে। বর্তমান প্রয়োজনের সাথে তাল রেখে নতুন ব্যবসা শুরু করেছে ৷ ভালো লাগলো তাদের উদ্যম দেখে-খুব এন্টারপ্রাইজয়িং!এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের এতো বড় কর্মহীন হয়ে যাওয়া শ্রমজীবীদের জন্য কি ভাবে নতুন কর্মসংস্থান করা যাবে? সরকার ইতমধ্যেই কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং অনেকগুলো আর্থিক প্রণোদনাও ঘোষণা করেছেন৷ কৃষি উৎপাদন স্থিতিশীল রাখা ও বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে ৷এমতবস্থায় গ্রাম অঞ্চলে কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজন ৷ আমাদের দেশের কৃষকরা প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে থাকে; তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষি বীমা ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। আর দেরি নয় — অতি দ্রুত কৃষি বিপণন ব্যাবস্থায় গতিশীলতা আনায়ন করে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে হবে I
আমাদের দেশের বহু শ্রমিক বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এর বিভিন্ন দেশে কর্মরত ৷ তবে বর্তমানের করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব শ্রমিকদের অনেককেই ফিরিয়ে দিচ্ছে ৷ এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় ৷এ ক্ষেত্রে আমাদের সদাশয় সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে ৷ অর্থনীতি রক্ষার স্বার্থে পৃথিবীর অনেক দেশ চলমান করোনা সঙ্কটের মাঝেই লকডাউন শিথিল করে অনেক কলকারখানা খুলে দিয়েছে৷ আমাদের দেশেও সীমিত আকারে এমনটি করা হয়েছে , কিছু বিপণিও খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ব্যাবসায়ীরা তাদের ব্যবসা স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু করতে পারছে৷ আর কিছু শ্রমিক কাজে ফিরতে পারছে; সাধারণ জনগণও একটু বাইরে যেয়ে জরুরি কেনা কাটা করতে পারছে। তবে সমস্যা হচ্ছে কোরোনাকালীন সুরক্ষা নিয়মাবলী যথাযথভাবে মেনে চলা। সব চেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ৷ করোনা কোবিদ-১৯ রোগের থেকে বাঁচার জন্য এটি অপরিহার্য ৷
অবশ্য আমাদের আইন রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিরলস ভাবে কাজ করছেন৷ আমার মনে হয়, একটা প্রব্লেম ও আছে — বেশিরভাগ বাজার হাটে লোকের সমাগম অনেক বেশি ৷ এছাড়া স্পেসেও কম, তার উপর তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ফেরার তাড়াহুড়ো ৷ এখানে শৃংখলা জোরদার করার জন্য জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে ৷ সাথে সাথে বাজার ব্যাবস্থাপনা আরো সুষ্ঠূ করতে হবে। বলা সত্যি কঠিন আরো কত দিন করোনা আমাদের মাঝে বিরাজ করবে ৷ অতএব বিধি নিষেধ মেনেই আমাদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে৷ আমার বিশ্বাস অচিরেই আমরা করোনা যুদ্ধে জয় লাভ করবো ৷
(লেখক: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা এর কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক )