বাংলাদেশের উপকূলের কাছে রাসায়নিক বহনকারী জাহাজে আগুন

ভারতের নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ভেসে যাওয়া একটি জ্বলন্ত মালবাহী জাহাজকে আটকে দিয়েছে। খবর দিয়েছে- বিবিসি বাংলা।
ভারতীয় নৌবাহিনীর কম্যান্ডোরা আকাশপথে দু’দিন ধরে জ্বলতে থাকা জাহাজটির ওপর রশি বেয়ে নেমে আসে এবং জাহাজটিকে নোঙর করতে সমর্থ হয়। নৌবাহিনী জানিয়েছে, এমভি কলকাতা নামের জাহাজটি বেশ দ্রুত সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের দিকে ভেসে যাচ্ছিল। নোঙর করতে পারার ফলে সেটিকে ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্র-সীমার ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর কমোডোর সুপ্রভ কুমার দে বিবিসিকে বলেন, “এখন আর জাহাজটি সমুদ্র-সীমা বা সুন্দরবনের কোর এরিয়ার দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা চেয়েছিলাম যদি ইঞ্জিন কোনোভাবে চালু করে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।”
“কিন্তু যখন নৌ-কমান্ডো আর জাহাজটির একজন অফিসার ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করেন, তখন আবারও বিস্ফোরণ হয়। আগুন ছড়াতে থাকে। সবাই অপারেশন বন্ধ করে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়।”
কৃষ্ণাপতনম থেকে রাসায়নিক নিয়ে জাহাজটি কলকাতা বন্দরের দিকে আসছিল। বন্দরে আসার আগে সমুদ্রের যে জায়গায় জাহাজগুলি নোঙর করে থাকে, সেই স্যান্ডহেডে নোঙর করে থাকা অবস্থাতেই ১৪ই জুন মাঝরাতে জাহাজটিতে আগুন লাগে।
ভারতীয় কোস্ট-গার্ড জানিয়েছে, এমভি কলকাতা থেকে তারা কোনও বিপদসংকেত পায় নি। পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য জাহাজ কোস্ট-গার্ডকে প্রথমে সতর্ক করে। পরের দিন প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় হেলিকপ্টার আর উদ্ধারকারী জাহাজ নিয়ে গিয়ে ২২ জন অফিসার ও নাবিকদের সকলকেই উদ্ধার করা হয়।
কমোডোর দে বিবিসিকে জানান, “ঐ অঞ্চলে বেশ জোর হাওয়া বইছে। তাতেই জ্বলন্ত জাহাজটি সুন্দরবনের কোর এরিয়া আর বাংলাদেশের দিকে ভেসে যাচ্ছিল। শুক্রবার বিকেলে জাহাজ কোম্পানি, ভারত সরকারের বাণিজ্যতরী বিভাগ, কোস্ট গার্ড আর কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে শনিবার সকালে মার্কোজদের নামিয়ে নোঙর করাটাই হবে আমাদের প্রাথমিক টার্গেট। তারপরে চেষ্টা করা হবে জাহাজটিকে যদি গভীর সমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়।”
“পরিকল্পনা মতো সী-কিং ৪২-সি আর একটা ডর্নিয়ার হেলিকপ্টার রওনা হয় কলাইকুন্ডা এয়ার বেস থেকে। জাহাজের অফিসারদেরও নিয়ে গিয়েছিলাম, কারণ তারাই সবথেকে ভাল চেনেন জাহাজটা। আইএনএস কদমৎ নামের একটি জাহাজকেও ডেকে আনা হয়েছিল।”
‘মার্কোজ’ নামে পরিচিত নৌবাহিনীর কম্যান্ডোরা জ্বলন্ত জাহাজ থেকে এধরনের উদ্ধার অভিযানের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আরব সাগরে মাঝে মাঝেই পণ্যবাহী জাহাজে আগুন লাগলে এই মার্কোজদেরই পাঠানো হয়।
শনিবার সকালে হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেঁধে জাহাজে নামিয়ে দেওয়া হয় কম্যান্ডোদের। নোঙর করার পরে জ্বলন্ত জাহাজের ইঞ্জিন চালু করার সময়ে আবারও বিস্ফোরণ হয়। কম্যান্ডোরা রশি বেয়ে হেলিকপ্টারে উঠে আসতে বাধ্য হন। – বিবিসি বাংলা, কলকাতা