ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে আইএবি’র গণমিছিলে পুলিশের বাধা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ভারতসহ বিশ্বের দেশে দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। তাবৎ আল্লাহবিরোধী শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের নাম-নিশানা মুছে ফেলতে কাজ করছে। এদের এই ষড়যন্ত্র মুসলমানদের নস্যাৎ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষতার শ্লোগান দিলেও মুসলমানদের ধর্মকর্ম পালন করতে দিচ্ছে না। ভারতের মুসলমানরা স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধোকাবাজির মুখোশ উম্মোচিত হয়েছে। ভারতের এই ধোকাবাজির বিরুদ্ধে ওআইসি ও জাতিসংঘ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কাজেই এই জাতিসংঘ কিছু করছেনা। এ জন্য মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা মুসলিমদেশগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।মঙ্গলবার সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিশাল গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে ভারতের উগ্রবাদী হিন্দু কর্তৃক অব্যাহত জুলুম-নির্যাতন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বাঁধা প্রদানের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে বিশাল গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পল্টন মোড়ে গণমিছিলের গতিরোধ করে পুলিশ। এ সময় জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে একটি ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলিপি জমা দিতে যান। কিন্তু দূতাবাসের হাইকমিশনার স্মারকলিপি গ্রহণ না করে লিয়াজো অফিসার দিয়ে গ্রহণ করায় নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান।
বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে জমায়েতের কথা থাকলেও পুলিশ দক্ষিণ গেটে জনতাকে দাড়াতে দেয়নি। পরে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের সংকীর্ণ জায়গায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দৈনিক বাংলা, পল্টন মোড়, বায়তুল মোকারের পশ্চিম ও পূর্ব প্লাজা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা আব্দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান, এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল করীম মারূফ, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, প্রিয়া সাহা বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু নির্যাতিত হয়েছে বলে মিথ্যা নালিশ দিয়ে দেশদ্রোহীর পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসীরা মুসলিম মা-বোনদের ধর্ষণ, বাড়ী-ঘর পুড়িয়ে দিয়ে, মসজিদ-মাদরাসা ভাঙচুর করে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছে। ওআইসি, জাতিসংঘের রহস্যজনক ভুমিকায় মুসলিমবিশ্ব ব্যথিত ও মর্মাহত।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, মুসলিম শাসকরা ভারতবর্ষ ৭০০ বছর শাসন করেছে। তখন মুসলমানরা যদি হিন্দুদের উপর নির্যাতন করতো তাহলে আজ ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের রাষ্ট্র হতো না। তিনি বলেন, এদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার অযুহাত তুলে ভারত কঠোর প্রতিবাদ জানালেও ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিন্তু বাংলাদেশের সরকার নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করতে পারেনি। তিনি ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সরকারকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে বলেন। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, ভারতের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষ রয়েছে সেখানে শিক্ষা, রাজনীতি ও সরকারি চাকুরীসহ সকল ক্ষেত্রেই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় আড়াই লক্ষ মানুষকে গৃহহীন হতে হয়। আসামে নাগরিকের তালিকা তৈরীর নামে ৪০ লাখ বাঙ্গালীকে দেশ ছাড়া করে বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এভাবে বিনা দোষে নিরপরাধ মুসলমানদের নির্যাতনের মাধ্যমে ভারত তাদের হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসন দক্ষিণ গেটে অনুমতি না দিয়ে আমাদের দাড়ানোর জায়গা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি সরকারের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
গাজী আতাউর রহমান বলেন, ভারতের মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব মিয়ানমারের মতো বাংলাদেশেও পড়বে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি