যেখানে অভিনেত্রী, পুলিশ প্রধানও গুম হয়ে যায়

সাম্প্রতিক সময়ে দুজন চীনা নাগরিকের হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সারা বিশ্বে, দেশটির মধ্যে তো বটেই।
এর একজন হলে এক্স-ম্যান ও আয়রন ম্যান মুভির অভিনেত্রী ফান বিংবিং।
তাকে কয়েক মাস ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছিলোনা, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার কোনো কার্যক্রম ছিলোনা।

এরপর হঠাৎ করেই চলতি মাসের শুরুতে তিনি হাজির হয়ে দু:খপ্রকাশ করলেন কর ফাঁকি দেয়ার বিষয় নিয়ে।
আবার তার ফিরে আসার দু দিনের মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন স্বয়ং ইন্টারপোলের প্রধান মেং হংওয়েই।
তার স্ত্রীর দাবি হারিয়ে যাওয়ার আগে তার স্বামী তাকে একটি ছুড়ির ইমোজি টেক্সট করেছিলেন যার মানে দাঁড়ায় যে তিনি বিপদে আছেন।
এরপর আটই অক্টোবর চীনা কর্তৃপক্ষ জানায় তাকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ দুটি ঘটনাই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তৈরি করে এবং আবারো বেরিয়ে আসে জোরপূর্বক গুম হওয়া চীনে নতুন কিছু নয়।
২০১২ সালে চীনের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন শি জিনপেং।
অনেকেই বলছেন এরপর দেশটিতে অভিযান আরও কঠোর হয় এবং এটি একটি কাঠামোতে রূপ নেয়।
বিশেষ করে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে শাস্তি পায় প্রায় দশ লাখ সরকারি কর্মকর্তা।
যদিও সমালোচকদের মতে দুর্নীতির মতো বিষয়টি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দাই বেশী নেয়া হচ্ছে।
দেশটির এক সময়ের প্রভাবশালী একজন নেতাকে জু ইয়াংকেংও এতে টার্গেট করা হয়েছিলো। ২০১৫ সালে তাকে জেল দেয়া হয় ঘুষের অভিযোগ তুলে।

আর এবারে আলোচনায় এসেছে অভিনেত্রী ফান বিংবিং ও ইন্টারপোল প্রধান মেং হংওয়েইর নিখোঁজের ঘটনা।
তারা দুজনই কয়েকদিনের জন্য হাওয়া হয়ে গেলেন যা সর্বত্র আলোচনার ঝড় তোলে।
এশিয়া সোসাইটির সিনিয়র ফেলো ইসাক স্টোন ফিস বলছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেখাতে চীন ও বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে তাদের নিজেদের নিয়মকানুনই এখানে নিয়ন্ত্রক এবং আর কারও কাছে তারা এসবের ব্যাখ্যা দিতে রাজী নন।
তার মতে ইন্টারপোল প্রধানের ঘটনা জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দিকে একটি পরিষ্কার বার্তা চীনা নাগরিক তিনি যেখানেই কর্মরত থাকুননা কেন তিনি যে কোনো সময়েই আটক হতে পারেন এবং অগ্রিম কোন তথ্য ছাড়াই সেটি হতে পারে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন এসব ঘটনার মাধ্যমে আসলে দেশের অভ্যন্তরেই কড়া বার্তা দেয়া হয় যে কেউই ছাড় পাবেনা।
কিন্তু যারা হাওয়া হয়ে যায় তাদের আসলে কী করা হয়?
অনেকেই সেখানে নির্মমতারও শিকার হয়েছেন।
না ঘুমাতে দেয়া, মারধর করা, যৌন নির্যাতন, ইলেকট্রিক শক দেয়া- এমন নানা পন্থা ব্যবহার করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের সময়।
আর এটা নির্ভর করে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তার ওপর। অথবা কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হতে পারে।
আটক থাকার সময় যাই ঘটুক না কেন যারাই হাওয়া হয়ে যান তারাই ফিরে এসে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
এখন যেমন করছেন অভিনেত্রী ফান কিংবা বিচারের মুখোমুখি হতে যাওয়া ইন্টারপোল প্রধানের দায়িত্ব পালন করা মেং।
সারা বিশ্ব কিভাবে দেখছে সেটি নয় বরং সেখানে প্রেসিডেন্ট শি ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্যই প্রথম ও শেষ কথা। – বিবিসি