শাহজাহান সিরাজের এই চলে যাওয়া

আতিকুর রহমান সালু
গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ বাংলাদেশে গেলে দোসতো আসম রবের কাছে জানতে পারলাম যে, শাহজাহান সিরাজ অসুস্থ। গুলশানে দেখতে গেলাম তাকে। দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভাবী তাকে ডাক দিলেন দেখ সালু ভাই এসেছে। ওঠো, পর পর কয়েকবার ডাক দেয়ার পর চোখ মেলে তাকালো। বললো সালু টাংগাইল এবং এর পরেই আবার ঘুমিয়ে গেল। মনের গহীন কোনে কত কথা, কত কাহিনী ও ঘটনা জমা হয়ে আছে যা কোনদিনই মুছে যাবার নয়। মনে পরে টাংগাইলে আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের কথা, ঢাকার ১৯৬৯ এর আমাদের ছাত্রদের ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলন ও গণ অভ্যূথানের কথা! জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ ভাঙ্গার কথা! আর ঐ সকল আন্দোলনে আমরা পরষ্পর ছিলাম সাহসী সৈনিক ও সমসাথী। ১৯৭০ সনের ২২শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) এর পক্ষ থেকে আয়োজিত লক্ষ লোকের সমাবেশে ছাত্র সমাজের হয়ে আমরাই সর্বপ্রথম স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পুর্ব বাংলা কায়েমের প্রস্তাব ও কর্মসুচী তুলে ধরেছিলাম। এই দাবী উত্তোলনকালীন সভায় বক্তব্য রাখেন তৎকালীন শ্রমিক ও জননেতা কাজী জাফর আহমেদ, ডাকসু’র সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন ও সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং অর্থনীতিবিদ মাহববু উল্লাহ
আমি ছিলাম তখন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সেই হিসেবে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেই প্রস্তাব পাঠ করার দাযিত্ব আমার উপরই অর্পিত হয়। সেই সভায় সভায় সভাপতি ছিলেন ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার। এর ফলে কাজী জাফর আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের ৭ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুব উল্লার ১ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ঘোষণা করা হয়। আমার নামেও ওয়ারেন্ট বের হয়। এর কিছুদিন পর পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়। আর সেই ইস্তাহার পাঠ করে বন্ধু শাহজাহান সিরাজ। জাতীয় নেতা শাহজাহান সিরাজের মৃতু ̈তে (ইন্নাল্লিাহি….রাজিউন) জাতি হারালো সময়ের এক সাহসী সন্তান।
করোনার মহামারীতে সবাই শংকিত। আমরা এখন আর সুখসপনে বিভোর হইনা! দু:স্বপ্নে ও যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত আমাদের হৃদয়! অসময়ে চলে গেল এক সময়ের লড়াকু সৈনিক বন্ধু আমার, না ফেরার দেশে! আমি তাঁর বিদেহী আতত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। তার এই চলে যাওয়ায় আমি আমার কবিতার
কয়েকটি চরণ উল্লেখ করতে চাই-
‘বাড়ন্ত সময় ছাড়ে শুধু
এক বুক দীর্ঘ নি:শ্বাস,
সত্য মিথ্যার হিসাব
মেলাতে গিয়ে ব্যস্ত সময়
বলে দেয় মৃত্যুই সত্য
আর কিছু নয়’!
পরম করুণাময় তাকে বেহেস্ত নসীব করুন। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
নিউজার্সী।