স্ত্রীকে বাজি রেখে জুয়ায় হার, ভারতের ওড়িশায় ধর্ষণের শিকার হলো নারী

অমিতাভ ভট্টশালী বিবিসি বাংলা, কলকাতা
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের এক বাসিন্দা বন্ধুর সঙ্গে জুয়া খেলতে নেমেছিলেন স্ত্রীকে বাজি রেখে। সেই জুয়া খেলতে গিয়ে হেরে যান তিনি। আর খেলার শর্ত হিসাবে স্ত্রীকে তুলে দেন জয়ী ব্যক্তির হাতে। সেই ব্যক্তি পরাজিতর স্ত্রীকে ধর্ষণও করেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি গত সপ্তাহের হলেও সম্প্রতি সামনে এসেছে, যখন স্থানীয় থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে আর জেলার পুলিশ সুপারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
কিন্তু ততদিনে নির্যাতিতার স্বামী এবং ধর্ষণে অভিযুক্ত – দুজনেই পলাতক।
পুলিশ বলছে, বালেশ্বর জেলার বাসিন্দা এক নারী তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন যে তার স্বামী জুয়া খেলায় হেরে গিয়ে স্ত্রীকে তুলে দিয়েছিল জুয়াতে জয়ী ব্যক্তির কাছে।
গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে সেই ব্যক্তি ধর্ষণও করে ওই নারীকে, এমনটাই অভিযোগ।
ভারতীয় আদালতের নির্দেশে নির্যাতিতাদের নাম প্রকাশ অপরাধ। তাই বিবিসি তাঁর নাম প্রকাশ করছে না।
ঐ নির্যাতিতা বিবিসিকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, “সেদিন রাত ১১টা নাগাদ স্বামী বাড়িতে ফেরে। বলে তার সঙ্গে যেতে হবে। অত রাতে কোথায় যেতে হবে, বাচ্চারা ঘুমোচ্ছে – এসব বলেছিলাম আমি। কিন্তু স্বামী শোনে নি। কোনও জবাব না দিয়ে একরকম জোর করেই নিয়ে যায় গ্রামের বাইরে। সেখানে তার এক বন্ধু আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল।”
ঐ নারী বলছিলেন, সেই ব্যক্তিকে স্বামীর বন্ধু হিসাবে তিনি ভাই বলে সম্বোধন করেন তিনি।
সেই ব্যক্তি তার হাত ধরে টানছিল। অনেক মিনতি করেছিলেন নির্যাতিতা।
শেষে তার স্বামীই ওই ব্যক্তির হাতে জোর করে তুলে দেয়। তারপরে স্বামীর সামনেই তাকে ধর্ষণ করে ওই ব্যক্তি, জানাচ্ছিলেন ওই নির্যাতিতা।
তিনি তখনও জানতেন না যে তাকে বাজি ধরে জুয়া খেলতে বসেছিলেন স্বামী এবং তিনি পরাজিত হওয়ায় তাঁকে ধর্ষিতা হতে হল।
পরের দিন ওই নির্যাতিতার মেয়ে গোটা ঘটনা জানায় তার দাদু অর্থাৎ নির্যাতিতার বাবাকে।
তিনি ওই নারীর শ্বশুরবাড়িতে এসে সবার কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চান। কেউই স্বীকার করেন নি।
গ্রামের মাতব্বররাও জানত না বিষয়টি। শেষে মেয়ে আর তার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তার বাবা।
তারপরে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন ওই নির্যাতিতা, সঙ্গে তার বাবাও ছিলেন।
কিন্তু অভিযোগ না নিয়ে মিটমাট করে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের।
বালিয়াপুল থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামসাগর পান্ডা অবশ্য অভিযোগ না নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, “আমি দিন দুয়েক ছুটিতে ছিলাম। ফিরে এসেই ঘটনা জানতে পারি। তারপরেই ঐ নারীর অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়। তাঁকে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর তার স্বামী এবং জুয়া খেলায় জয়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
নির্যাতিতার বাবা বিবিসিকে জানিয়েছেন, “পুলিশ সুপারের আদেশের পরেই মামলা নেওয়া হয়েছে। আর তারপরেও এমন ভাবে আমার মেয়েকে জেরা করা হচ্ছে, নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হচ্ছে, যেন মনে হচ্ছে তার স্বামী নয় আমার মেয়েই অপরাধী।”
তবে যতদিনে অভিযোগ জমা পড়েছে, ততদিনে নির্যাতিতার স্বামী এবং ধর্ষণকারী, দুজনেই পলাতক। – বিবিসি বাংলা