অনুষ্ঠানে গান বাজালে জানাজা বা বিয়ে না পড়ানোর ঘোষণা

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার একটি এলাকায় ইউপি ওয়ার্ড সদস্য, পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির যৌথ নির্দেশে বিয়ে, সুন্নতে খৎনা ও গায়ে হলুদের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে গান-বাজনার আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মাইকিং করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী কোনো পরিবার এই নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিয়ে পড়াতে বা দোয়ায় কোনো আলেম অংশগ্রহণ করবে না। এমনকি ওই পরিবারের কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়াতেও মসজিদের ইমাম বা অন্য কেউ অংশগ্রহণ করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) উপজেলার বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির লোকজন বাগে জান্নাত জামে মসজিদে জুমার নামাজের সময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাব্বির আহম্মেদ ইমন। এই সিদ্ধান্তের সাথে তিনি নিজেও একমত আছেন বলে জানান। তার সমর্থনেই ওয়ার্ড জুড়ে এমন মাইকিং করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে গান-বাজনা করলে বিয়েতে এবং জানাজার নামাজে মসজিদের ইমামের অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে দেখছেন।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাব্বির আহম্মেদ ইমন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাগে জান্নাত জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান জুমার নামাজের খুতবার আগে বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে গান-বাজনার প্রসঙ্গটি তোলেন। পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি সর্বসাধারণকে অবগত করতে এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলে তার জানাজা ও বিয়েতে কোনো ইমাম বা আলেম যাবেন না।
এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি সঠিক বলে দাবি করেন এই ইউপি ওয়ার্ড সদস্য।
এই ইউপি সদস্য আরো বলেন, উচ্চস্বরে গান-বাজনায় মানুষের ক্ষতি হয়। বারবার বলার পরেও কেউ তা মানছেন না। এজন্য এবার এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ঘরের ভেতর টিভিতে কিংবা মোবাইলে গান শুনলে তাতে সমস্যা নেই। শুধুমাত্র লাউড স্পিকারে গান না বাজানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্তের সাথে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির পূর্ণ সমর্থন আছে।
বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদ বলেন, এমন ঘোষণা কেউ করতে পারেন না। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেবো। আগামীকাল পরিষদে গিয়ে আমার প্রথম কাজ হবে এই বিষয়ে তদন্ত করা। তারপর ওই ইউপি সদস্যকে ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চস্বরে কেউ গান বাজিয়ে অন্যকে বিরক্ত করলে সেটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই জানাজা ও বিয়ে না পড়ানোর বিষয়টা বাড়াবাড়ি।
তবে করোনাকালে গান-বাজনার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুদ্দীন চৌধুরি সময় নিউজকে বলেন, মহামারি করোনাকালের শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, গান-বাজনার আয়োজন করলে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। করোনা ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যে সর্বসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে আমরা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে লকডাউনের সময় থেকেই সকল এলাকার পঞ্চায়েত কমিটি, মসজিদ কমিটি ও জনপ্রতিনিধিদের অবগত করেছি।
তিনি বলেন, সরকারি আদেশ এখন পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও অনেক এলাকাতেই তা মানা হচ্ছে না। তাই কোন কোন এলাকায় পঞ্চায়েত কমিটি, মসজিদ কমিটি ও জনপ্রতিনিধিদের কঠোর হতে হচ্ছে। তবে কেউ মারা গেলে তার জানাজায় নামাজ পড়াতে মসজিদের ইমাম বা অন্য কেউ অংশগ্রহণ করবে না এবং বিয়ে পড়াতে বা দোয়ায় কোনো আলেম অংশগ্রহণ করবে এমন ঘোষণার কথা আমার জানা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন ধরণের কোন কঠোর সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়নি। যদি কেউ করে থাকে তাহলে ঠিক করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। -Ukhiya News