করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হতে হবে -পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হতে হবে এবং বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জনগণকে সতর্ক করতে ব্যাপক লিফলেট, মাস্ক ও সেনিটাইজিং করা এবং মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সেভলনের ব্যবস্থা করা। করোনা ভাইরাস, আতঙ্কিত নয়, সতর্ক হই।
ইসলাম কী বলে?
ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের প্রত্যেক সমস্যার সমাধান আছে বলে এই জীবন ব্যবস্থা সকল যুগের সকল মানুষের উপযোগি। ব্যাপক হারে মানুষ আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হলে আল্লাহ পৃথিবীতে গজব নাজিল করেন যাতে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবার মাধ্যমে আবার ফিরে আসতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘জলে ও স্থলে বিপর্যয়, তা মানুষের হস্ত অর্জিত কর্মফল’ সূরা আর রূম-১৪। যেকোনো মহামারি থেকে বাঁচতে প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে নিজেদের কৃতকর্ম থেকে তাওবা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। এই মূহুর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা, সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নির্দশণ গুলোর একটি হলো মহামারি। মহামারি আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসূল সা.এর ভাষায় মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। হাদীসে এরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, মহামারিতে মৃৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। বুখারী-২৮৩০।
এছাড়া নবীজি সা. মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোআ পড়তে বলেছেন, আল্লাহুম্মা ইন্ন আউযুবিকা মিনাল বারাসি,ওয়াল জুনূনি ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সাইয়্যিইল আসক্বাম।
করোনা ভাইরাস কী
করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত একটি বহুল আলোচিত রোগ। কোভিড-১৯ নামের ভাইরাসটি সৃষ্ট রোগটি সুম্পূর্র্ণ নতুন হওয়াতে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট ঔষধ বা ভ্যাকসিন নেই। এটি মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন পশু, বিড়াল, উট ও বাদূড়ের মধ্যে দেখা যায়। সম্প্রতি চীনের উহান নামক একটি শহরে প্রথম এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় গেছে, বর্তমানে শনাক্তকৃত বেশির ভাগ রোগি উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বের অধিকাংশ দেশে এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার সাথে সাথে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
নভেল করোনা ভাইরাস করণীয়-র্বজনীয়
যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ায়
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফসে সংক্রামণ ঘটায় এবং কাঁশি, হাঁচি বা শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে হাতের মাধ্যমে অন্য কোন বস্তুতে ভাইরাসটি চলে যেতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, রোগ বালাই হওয়া না হওয়ার বিষয়ে আল্লাহওয়ালার প্রতি বিশ্বাস রেখে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা শরীয়তবিরোধী নয়।
আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ: জ্বর ও কাঁশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া, অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রামণের লক্ষণ দেখা দিতে ২ থেকে ১৪ দিন দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি, এক সপ্তাহের মধ্য দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।
যে সমস্ত সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, হালাল খাবার ভক্ষণ করা ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা। ঘরে ফিরে এবং কিছুক্ষণ পর পর সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া-সুন্নত তরিকায় অযু গোসল করা। ঘরের বাইরে প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা। প্রচুর পরিমাণে ফলের রস ও পানি পান করা। কিছু খাওয়া ও রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করা। হাঁচি-কাঁশির সময় টিস্যু ব্যবহার করা, নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দেয়া, হাতের তালুতে হাঁচি না দেয়া। ময়লা কাপড় জমিয়ে না রেখে দ্রুত ধুয়ে ফেলা। থাকার ঘর ও কাজের জায়গা নিয়মিত পরিস্কার রাখা। যাদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ারর লক্ষণ দেখা গেছে তাদের কাছাকাছি না যাওয়ার চেষ্টা করা, অসুস্থ জীব-জন্তু থেকে দূরে থাকা। সর্বোপরি বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরেও আল্লাহ চাইলে যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারেন অথবা মাফ করেও দিতে পারেন। সেজন্য সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং মহামারির হাত থেকে রক্ষায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া । বিশেষ করে সকলে অতীত গুণাহের জন্য তওবা করা এবং ইস্তেগফার পড়ে ভবিষ্যতের গুণাহ না করার অঙ্গীকার করা।
বার্তাপ্রেরক, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, প্রচার সম্পাদক