ডাক্তাররাই খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ পান না: বিএসএমএমইউ

বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলায় কারাভোগরত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যথাযথ না হওয়ার অভিযোগ আবারও সামনে আসার পর – তা নাকচ করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
“অধ্যাপকগণ তাদের স্বাভাবিক রাউন্ডে গিয়ে সবসময় বেগম খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ পান না….অনেক সময় বোর্ডের চিকিৎসকগণ বিকেল চারটা ত্রিশ পর্যন্ত বসে থেকেও ওনার সাথে দেখা করার সুযোগ পাননি” – এক সংবাদ সম্মেলনে একখা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক।তিনি জানান, খালেদা জিয়াকে দেখতে হলে চিকিৎসকদের পূর্বে অনুমতি নিতে হয়।
কারাবন্দী হিসেবে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।
দু’দিন আগে বিএনপি নেত্রীর পরিবারের কয়েকজন সদস্য দেখা করার পর তাঁর বড় বোন

Khaleda Zia shifted to BSMMU Hospital – File photo
Khaleda’s sister Selima tells journalists she needs medical treatment abroad. UNB
BNP secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir.

সেলিমা ইসলাম অভিযোগ তোলেন যে, যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় খালেদা জিয়া দিনে দিনে পঙ্গু হতে চলেছেন। তিনি আরো বলেন মিসেস জিয়াকে জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ পাল্টা অভিযোগ করে, খালেদা জিয়া চিকিৎসায় যথাযথ সাহায্য করছেন না।
বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে নানা অভিযোগ করছে, তবে সরকার বলছে, মামলায় জামিন পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক কৌশল থেকে বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়কে ইস্যু করছে।
প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে অতিমাত্রায় রাজনীতি হচ্ছে কিনা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে সরকারের গঠিত যে বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছে, সেই বোর্ডের কয়েকজন সদস্য হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন, তাদের হাসপাতালে নেয়ার পর থেকে গত সাত মাসে খালেদা জিয়ার অবস্থার কোন অবনতি হয়নি।
খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ান অভিযোগ নাকচ করে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে, চিকিৎসারই সেবা দিতে গিয়ে যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
“একটি কথা উল্লেখ করতে চাই যা আগে বলতে চাইনি। কিন্তু প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে বিষয়টি পরিস্কার করা দরকার। আমাদের হাসপাতালের অফিস সময় দু’টা পর্যন্ত। প্রায় সময়ই তিনি (খালেদা জিয়া) অনুমতি দেন দেড়টার পর। নির্ধারিত সময়ে তাঁর দেখা পাওয়া যায় না। এমনকি অনেকবার চিকিৎসক সাড়ে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে এসেছেন”।
ব্রিগ্রেডিয়ার হক আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার আর্থরাইটিসের চিকিৎসায় ভ্যাকসিন দেয়াসহ কিছু ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে রোগীর অনুমতি মিলছে না এবং সেকারণে চিকিৎসকরা এগুতে পারছেন না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের পাল্টা অভিযোগ
তবে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের একজন জাহিদ হোসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মানতে রাজি নন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, সরকার গঠিত বোর্ডের চিকিৎসকরাই নিয়মিত পরিদর্শনে না গিয়ে খালেদা জিয়ার ওপরই দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া বন্দী হিসেবে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। এখানে তাঁর সাহায্য না করার কোন বিষয় থাকতে পারে না বলে তারা মনে করেন।
‘খালেদাই সহযোগিতা করছেন না’, ডাক্তারদের অভিযোগ
জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেছেন, সরকারি বোর্ডের চিকিৎসকরা কোন কোন সপ্তাহে পরিদর্শনেই যান না, এমন তথ্য তাদের কাছে আছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন, সোমবার এবং আগের দিনে খালি পেটে খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস ছিল ১৩ এর উপরে। এ থেকে বোঝা যায় যে তাঁর কোন কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই।
চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি
চিকিৎসকদের মতো রাজনৈতিক অঙ্গনেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। বিষয়টি নিয়ে এখন অতিমাত্রায় রাজনীতি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবায়দা নাসরিন।
“আমাদের দেশে তো সবকিছু নিয়েই রাজনীতি হয়। খালেদা জিয়া যে দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন। যখন মানবিকভাবে তাঁর চিকিৎসার বিষয় এসেছে, তখন সরকারি দল বলছে যে, চিকিৎসকরা বলছেন তিনি ঠিক আছেন। এই বিষয়গুলো একেবারে রাজ৭নীতি হয়ে গেছে। এখানে রাজনীতির বাইরে ভাবার আর কোন জায়গা নাই।”
এমাসে বিএনপির এমপিদের পর অল্প সময়ের ব্যবধানে খালেদা জিয়ার বড় বোনসহ কয়েকজন আত্নীয় তাঁর সাথে দেখা করে চিকিৎসা যথাযথ না হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির যে দু’টি মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে, সেই দু’টিতেই হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে।
এখন তারা জামিনের আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যাবেন। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পর আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। সেজন্য বিএনপি চিকিৎসার বিষয়কে ইস্যু করছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, “বিএনপি রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। প্রথম তারা এই রাজনীতি করতে চাইছে যে, যেনো তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে বলতে পারে যে তার অবস্থা খারাপ। আবার এটাকে ইস্যু করে আন্দোলন করার চেষ্টাও তাদের আছে। কিন্তু সরকার কজোন রাজনীতি করছে না।”
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা অভিযোগ করেন সরকারের বিরুদ্ধে।
“আমরা এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যে, বিএনপি কোন রাজনৈতিক খেলা খেলছে না এবং তাঁর পরিবারও এমন খেলা খেলছে না। এটা সম্পূর্ণভাবে সরকার রাজনীতি করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সরকারের কারণেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক তথ্য দিচ্ছে না।”
“সঠিক বিষয় হচ্ছে, তিনি এক অসুস্থ যে তিনি নিজে হাত দিয়ে খেতে পারেন না এবং তিনি পায়ে হাঁটতে পারেন না। তিনি সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। এসবই হচ্ছে বাস্তবতা।”
মির্জা আলমগীর বলেন, “এগুলো অস্বীকার করলে তো মনে করতে হবে যে, দেশে এখন মানবতা বলে কিছু নেই।” – বিবিসি বাংলা খবর