নিরাপদ পৃথিবীর দাবিতে জলবায়ু ধর্মঘট: জরুরি পদক্ষেপ আহ্বান

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ – জলবায়ু ন্যায্যতা এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি নিয়ে জলবায়ু ধর্মঘটে শুক্রবার ঢাকার রাস্তায় নামে শত শত তরুণ। তাদের দাবি, পৃথিবী একটাই আর এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এখনই।

Students at Global Climate Strike in Dhaka on Friday demand climate justice
Dhaka climate protesters displaying their slogans

কার্বন নিঃসরণে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে কম তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অপরদিকে এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ব নেতৃত্ব জোরালো কোন ভূমিকা পালন করছে না। আর তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি নিয়ে আজ শুক্রবার ‘ গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ এর অংশ হিসেবে তরুণসহ নানা বয়সের মানুষ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের এই দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে পাশে দাঁড়ায় একশনএইড বাংলাদেশ।
২০১৮ এর আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, বিশ্বের শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দেন যে, জলবায়ু উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে আর এজন্য সময় আছে মাত্র ১২ বছর। এই ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ০.৫ ডিগ্রিও যদি বাড়ে তবে খরা, বন্যা, চরম তাপ এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে শত কোটি মানুষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বনেতারা এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী নয় এবং দ্রুত সময়োপযোগী কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, ফলে বিশ্বে এখন জলবায়ু জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান এই তরুণেরা।
এই আন্দোলনে অংশ নেয় ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নামক একটি যুব নেটওয়ার্ক। এর কো-অর্ডিনেটর সোহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু সংকট আমাদের দেশ ও পৃথিবীর জন্য এক বিপর্যয় হয়ে দাড়িয়েছে। জলবায়ু সংকট উত্তরণে প্রয়োজন দূষণকারী দেশগুলো থেকে প্রাপ্য ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বৃহদাংশই হচ্ছে তরুণ, যারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।
জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঝুঁকিসমূহ আমরা মোকাবেলা করছি, সে বিষয়ে আমাদের কথা নীতিনির্ধারকদের শুনতে হবে এবং তা বিবেচনা করে জরুরী ভিত্তিতে কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সবুজ উদ্যোগে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। আমরা দূষণের বিরুদ্ধে এবং জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সুবিচারের পক্ষে আমাদেও দাবি পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচতে দিন। পৃথিবীকে খুন করার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম পরিচালক মোঃ আসগর আলী সাবরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসকল সংকট তৈরি হচ্ছে তা সমাজে আরো বেশি অসমতা সৃষ্টি করছে। এই অসমতা দূর করতে এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করতে জোরালো দাবি তোলা প্রয়োজন যা বিশ্বব্যাপী তরুণদের মধ্যে থেকে উঠে আসছে। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একটি বড় ইস্যু। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে দেখা যায় বাংলাদেশের মত যে সকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ, তাদের ক্ষেত্রেই বরাদ্দ সবচেয়ে কম। এই বরাদ্দ বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর রেজিলিয়েন্স এবং ক্লাইমেট জাস্টিস ইউনিটের প্রধান তানজীর হোসেন বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসবে যেখানে প্রতিটি দেশই তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে কথা বলবে। তরুণদের সাথে সংহতি প্রকাশ করা একশনএইড বাংলাদেশ-এর এই আন্দোলনসহ দেশব্যাপী আন্দোলনসমূহ বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জোর গলায় জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে। সাথে সাথে এই আন্দোলন জাতীয় পর্যায়ও সরকারকে কার্যকর জলবায়ু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে।
একশনএইড ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূল পর্যায় থেকে বৈশ্বিক নীতিমালা পর্যন্ত জলবায়ু ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করছে। একশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জরুরি জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে নেওয়া দরকার।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় প্লাস্টিক ও ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি একটি দানবাকৃতির মূর্তি, যাকে বলা হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দানব’। প্লাস্টিক ও ইলেক্ট্রনিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য কিভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই দানবের মধ্য দিয়ে।
এই ধর্মঘটে আরো অংশগ্রহণ করে তরুণদের প্লাটফর্ম একটিভিস্টা, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয় ও ইউল্যাব বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, কেয়ার বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।
ওয়াহিদা জামান সিথি – যোগাযোগ কর্মকর্তা, একশনএইড বাংলাদেশ