মওলানা আবদুর রহীম: দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল যার মিশন

ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম ছিলেন অগ্র-পথিক এক সিপাহসালার। তিনি এতদাঞ্চলের ইসলামী আন্দোলনের স্থপতি। তিনি জেল-জুলুম উপেক্ষা করে ইসলাম তথা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে আমরণ লড়াই করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম-হত্যা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অনৈতিকতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতির মত কঠিন দুর্যোগ থেকে একমাত্র ইসলামী বিপ্লবই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। আর সেই বিপ্লব হতে হবে প্রচলিত রাজনীতি তথা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নয়; বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসৃত পথকেই গ্রহণ করতে হবে। আর সে পথ হচ্ছে এদেশের সাধারণ মুসলমানকে উদ্বুদ্ধ করে গণজাগরণ, গণসংগঠন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইসলামী গণবিপ্লব। তিনি তার কর্ম ও লেখনি দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত প্রতিটি মানুষের জন্য সেই পথ নির্দেশনাও রেখে গেছেন। রাসুল (সা) এর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম বাংলাভাষী মুসলমানদের সামনে তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামকে একটি আধুনিক শাশ্বত মতাদর্শ তথা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। একজন সফল সাধক হিসেবে তিনি কৈশোর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইসলামী চিন্তা চেতনার বিকাশ এবং এ ভূখন্ডে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সাধনায় লিপ্ত ছিলেন।
১৯৪৫ সাল থেকে উপমহাদেশের প্রথম সুসংগঠিত ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এতদাঞ্চলের ইসলামী আন্দোলনের স্থপতি হিসেবে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। পাকিস্তান আমলে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে তিনি প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনকে সংগঠিত করেছেন। ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সংসদে ইসলামকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সংস্কারকের ভূমিকা পালন করেছেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন ও ইসলামী খিলাফতের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সবশেষে দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সূচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম বিশ্বাস করতেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং এই জীবন ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এককথায় দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম নামাজ, রোজার মতোই একটি ফরজ ইবাদত। জীবনের সূচনালগ্ন থেকে শেষ অবধি তিনি তার এ বিশ্বাসকে কর্মে রূপান্তর করেছেন।
আজ ৪ অক্টোবর,বিকেলে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত ‘মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)-এর চিন্তা দর্শন ও আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হুসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন, দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ শাওকাত হোসেন, বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচীব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচীব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচীব আলহাজ্ব কাজী আবুল খায়ের, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচীব মাওলানা মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ময়নুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান হামিদী, এফবিসিসিআই এর পরিচালক ও খন্দকার গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খন্দকার মুহাম্মদ রুহুল আমীন, দারুন নাজাত ছিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আলমগীর হোসাইন,লাস্টনিউজ বিডি ডটকম এর সম্পাদক আলীমুজ্জামান হারুন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম রেজা, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারী মোস্তফা তারেকুল হাসান,প্রমূখ।
বার্তা প্রেরক – মো: আবু বকর সিদ্দিক, অফিস সম্পাদক