মুম্বাইতে আবার ‘অবৈধ বাংলাদেশী ‘খোঁজার হিড়িক

ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই দেশের আরও নানা প্রান্তে অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করার দাবি তুলছে বিজেপি-সহ নানা রাজনৈতিক দল।
আর এই পটভূমিতেই আরও একবার আক্রমণের নিশানায় মুম্বাইয়ের কথিত অবৈধ বাংলাদেশীরা, যাদের দেশ থেকে তাড়ানোর দাবি উঠছে প্রকাশ্যেই।

কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী কি আদৌ ভাবিত, না কি দেশে ভোটের আগে শ্রমজীবী এই গরিব মানুষগুলোকে আরও একবার রাজনৈতিক বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা চলছে?
মুম্বাইয়ের দক্ষিণতম প্রান্তে চার্চগেট স্টেশন থেকে ছাড়া যে লোকল ট্রেনগুলো শহরের লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে, তার অনেকগুলোরই রুটের একেবারে শেষপ্রান্তে শহরতলির ভায়ান্দার স্টেশন।
আর সেই স্টেশন থেকে একটু দূরেই শহরের গরিবগ মানুষের এক বিশাল কলোনি, লোকের মুখে মুখে যার নাম ‘বাংলাদেশ বস্তি’।
সম্প্রতি ভায়ান্দারের এই বস্তির নাম উঠে এসেছে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের আলোচনাতেও।
শাসক বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও এমপি বিনয় সহস্রবুদ্ধে জানাচ্ছেন, “সুদূর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য লোকজন অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে ভায়ান্দারে পাড়ি দিচ্ছে। মুম্বাইয়ের আশেপাশে টিলা-জঙ্গলগুলো দখল করে তারা গড়ে তুলছে বসতি, চালাচ্ছে নানা বেআইনি ধান্দা। এমন কী পুলিশ হানা দিতে গেলেও তাদের পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে এই বাংলাদেশীরা!”
বিজেপির এই দাপুটে নেতার হুঁশিয়ারি, অবৈধ বাংলাদেশীর সমস্যা শুধু আসামের নয় – মুম্বাই-সহ গোটা দেশেই তা ‘টাইম বোমার মতো টিক-টিক’ করছে।
তার দলের সভাপতি অমিত শাহ তো আরও একধাপ এগিয়ে ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের কখনও ‘ঘুষপেটিয়া’ (অনুপ্রবেশকারী), কখনও ‘দীমক’ (উইপোকা) বলেও গালাগাল করছেন।
ভায়ান্দারের তথাকথিত ‘বাংলাদেশ বস্তি’তে খোঁজখবর করতে গিয়ে কিন্তু চমকের পর চমক। বস্তির বাসিন্দা ঊষা, মুকেশরা জানাচ্ছেন তাদের কলোনির নাম বাংলাদেশের নামে হলেও সেখানে একঘর বাঙালি পর্যন্ত নেই।
বরং বাইরের একটা দেশের নামে কেন তাদের কলোনির নাম, সেটাই তাদের এতদিন ভাবিয়ে এসেছে।
আরও পুরনো বাসিন্দাদের কাছে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে যখন পুরনো ঝোপড়পট্টি ভেঙে এই কলোনি গড়ে তোলা হয়, তখন বাংলাদেশ যুদ্ধে জেতার সম্মানেই কিন্তু বস্তির নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের নামে।
কিন্তু না, কোনওদিন কোনও বাঙালি এই তল্লাটে কখনওই ছিল না।
অথচ এই ‘বাংলাদেশ বস্তি’ নামটা ব্যবহার করেই কথিত অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের আবেগকে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন বিজেপি নেতারা।
মাসছয়েকের মধ্যেই ভারতে সাধারণ নির্বাচন – অন্তত তখন পর্যন্ত কিছু কিছু রাজনৈতিক দল যে এই ইস্যুতে তাদের ভোগাবে, সেই ইঙ্গিত কিন্তু পরিষ্কার! -বিবিসি