সকল যৌথ নদীর অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা চুক্তি দাবি

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল – চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা থেকে গঙ্গার পানি না পাওয়ার ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে প্রতিপক্ষের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা জানি ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী পানি বন্টন চুক্তি সই হবার পর প্রায়ই এমন চিঠি চালাচালি করতে হয়েছে। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে হিমালয়ের বরফগলা পানি নাআসায় গঙ্গায় পানির সংকট হয়েছে। দেবে কোথা থেকে। গঙ্গা চুক্তি ২০২৬ সালে সমাপ্ত হবার আগেই এবিষয়ে আমাদের সরকারকে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত যৌথ নদীগুলোর ক্রমাগত প্রবাহ কমেযাবার বিপর্যয় বিষয়ে সাংবাদিকগনের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আইএফসি নেতৃবৃন্দ এ মতপ্রকাশ করেন।
তাঁরা বলেন আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি) মনে করে বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে সম্পর্কের যে উন্নয়ন হয়েছে তা আরো জোরদার করতে তাঁরা সক্ষম হবেন যদি দুই দেশের মানুষ পারষ্পরিক আস্থার ভিত্তিতে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারে। রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও এই উপমহাদেশের সকল মানুষ একই প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মৌসূমী বায়ুর বলয়ে বসবাস করে। রাজনৈতিক সীমারেখায় বিভক্ত করায় হিমালয় থেকে নেমেআসা প্রাকৃতিক নদীগুলো মরে যাচ্ছে। গঙ্গা অববাহিকায় ৩০টির অধিক এবং সারা বাংলাদেশে শতাধিক নদী মরেগেছে। শুকনো মৌসূমে এগুলোর প্রবাহ থাকেনা।
শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবে ভারত অংশেও নদী মরে যাচ্ছে। যার পানির হিস্যা নিয়ে যুগের পর যুগ ভারতের দাক্ষিনাত্তের বিভিন্ন রাজ্য জলযুদ্ধ করেছে সে কাবেরী নদীর পানিও শুকিয়ে গেছে। একই অবস্থা সবরমাটি নদীর এবং ইতিহাসখ্যাত যমুনার। এ তথ্য ভারতের পত্রপত্রিকার এবং পানি বিশেষজ্ঞদের। স্বল্পমেয়াদি ও অদূরদর্শি পানিব্যবস্থাপনা নদীগুলোর এ দুরবস্থার জন্য দায়ী। এসব সূত্রথেকে পাওয়া তথ্য, গঙ্গানদীও ভারতে মরতে শুরু করেছে। ড্যাম-ব্যারেজ ভিত্তিক পানি উন্নয়ন পরিহার করে নদীর অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই শুধু হিমালয়ের নদ-নদীগুলোর সুস্থ প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। উৎসস্থল থেকে সাগর পর্যন্ত এনদীগুলো টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রবাহমান ও জীবিত রাখা তীরবর্তী সকল জনগোষ্টির কল্যাণ এবং উপমহাদেশের জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
তাঁরা বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে নদী মরে যাবার সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখিন বাংলাদেশ। গঙ্গার পর তিস্তাসহ অভিন্ন সকল নদীর প্রবাহ উজানে অন্যত্র সরিয়ে নেবার কারণে এদূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই হিমালয়ের নদীগুলোর অপমৃত্যরোধে বাংলাদেশকে স্বোচ্চার হতে হবে। বিশ্বের সকল পানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন নদীগুলোকে জীবন্ত রাখতে হলে সেগুলোকে সাগর পর্যন্ত প্রবাহমান রাখতে হবে। তাই গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশীপের সুপারিশ – সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা। উপমহাদেশের সকল দেশ এই পার্টনারশীপের সদস্য।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইএফসি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ডঃ এস আই খান ও সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার, আইএফসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান আতা ও আইএফসি বাংলাদেশের মাহমুদ হাসান মুকুট।
উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে মতবিনিময়ে অংশ নেন নয়া দিগন্ত পত্রিকার অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক মুহম্মদ বাকের হোসাইন, বার্তাসংস্থা ইউএনবি’র সিনিয়র সাংবাদিক সদরুল হাসান, ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম আজাদ, দিনকাল পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা আলী মামুদ ও এসএ টিভির বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহুদ্দিন বাবলু।
তাঁরা বলেন বেশ কয়েকযুগ ধরে অপরিনামদর্শি পানি ব্যবস্থাপনার জন্য মৃতবস্থায় থাকারপর কয়েক বছরধরে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ও তার্কমেনিস্তানের মধ্যে প্রবাহিত আমু-দরিয়া আবার জীবন ফিরে পেয়েছে।
হিমালয়ের নদীগুলোকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষার জন্য তাদের পরিবেশসম্মত প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখতে হবে। তার আগেপরে যদি কোন চুক্তি হয়, তা অবশ্যই হতে হবে অববাহিকা ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার। প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজসহ।
তারা এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবস্থান গ্রহনে সহায়তার জন্য পানি ব্যবস্থাপনার এই মৌলিক বিষয়গুলোর উপর রিপোর্ট, ফিচার, নিবন্ধ প্রকাশ ও প্রচার করার আহবান জানান। – ষ্টাফ রিপোর্টার