সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের জাতীয় পতাকা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

১ ডিসেম্বর ২০১৯ – আজ ১ ডিসেম্বর ২০১৯ বিকাল ৩ টায় শাহাবাগস্থ জাতীয় যাদুঘরের সামনে ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ ও ‘সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চে’র উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়ন, শোষণ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতে জাতীয় পতাকা মিছিল ও সমাবেশ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পতাকা মিছিলের উদ্বোধন করবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ জাসদ এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত, সহ-সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সংস্কৃতি মঞ্চের আহবায়ক সেলিম রেজা, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, মক্তিযুদ্ধা সংহতি পরিষদের নেতা জোবায়ের আলম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ, সানোয়ার হোসেন সামছী, সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। সভা শেষে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঘোষণা পত্র পাঠ করে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন- সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. অসিত বরণ রায়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের গৌরবের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদানের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করার প্রাককালে আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশটিতে অসাম্প্রদায়িকতার যে গৌরব রয়েছে তা সমুন্নত রাখতে আরো একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। সেই জাগরণের মধ্যে দিয়ে শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে এটাই আজকের প্রত্যাশা। জাতীয় চার মূলনীতি সমুন্নত রাখার স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক ধারার সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা যে মুক্তিযুদ্ধকে ধারন করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেই, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্বাসিত হতে বসেছে। আমাদের পবিত্র সংবিধানে সকল নাগরিকের সমঅধিকারের কথা থাকলেও আজকের জাতীয় জীবনে অসমতা, বঞ্চনা বিশেষ করে সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়ন অত্যাচার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি মাফিয়াদের তোষননীতির ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা এখন মাফিয়া পৃষ্ঠপোষিত। এরা সমাজের নিয়ামক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিবাদ, মুনাফাখোর, লুটেরা এরা সবসময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, এদের নিজস্ব কোন দল নেই। এদেরকে প্রতিরোধ না করা গেলে মুক্তিযুদ্ধকে বাচাঁনো যাবে না। আজকে মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই মুক্তিযুদ্ধ ও শাহীদানের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।
সভায় ঘোষনায় বলা হয়, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ও বহু আতœত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত চিরঅম্লানআমাদের বিজয় দিবস। মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অভিবাদন জানাচ্ছি সেই সকল বীর সেনানীদের, যাদের রক্তে রঞ্জিত লাল সবুজের আমাদের জাতীয় পতাকা। শ্রদ্ধা জানাই ৩০ লক্ষ মানুষদেরকে যাদের চোখের নিভিয়ে দেয়া দিপ্তী উজ্জ্বলতর করে তুলেছে আজকের বাংলাদেশকে। আজকের এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, যে মহান নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালী জাতি স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, সেই মহান নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে । একইসাথে স্মরণ করি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উষালগ্নে নির্মমতায় শিকার আমাদের চেতনার বাতিঘরÑ শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক-সহ অকুতভয় কলম সৈনিকদের।
এক সাগর রক্তের বিনিমিয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত, শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকারে আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে ৩০ লক্ষ তাজাপ্রাণ ও দু-লক্ষাধিক নারীর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি পরাধীনতার গøানি থেকে মুক্তি লাভ করে। এই বিজয়ের গৌরবের দিক বিশ্লেষণ করলে আমরা শিহরিত হই, কারণ মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতিকে বিশ্বের কাছে সাহসী ও বীরের জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মায়ের ভাষাকে রক্ষার প্রশ্নে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার ইতিহাস শুধুমাত্র আমাদেরই। সাম্প্রদায়িকতাবাদ ও ধর্মান্ধতার ভিত্তিতে কোনো দেশ বা জাতি যে টিকে থাকতে পারেনা, তা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসই প্রমাণ করেছে। এতসব অর্জনের পরও আজকের প্রেক্ষাপটে দুভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা হারাতে বসেছি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলভিত্তিÑ একটি শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের দৃঢ়তা ও আকাঙ্খাকে। সময়ের ব্যবধানে আমরা জাতির পিতার সপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসবাদ, মাফিয়াচক্র ও দেশ-বিদেশী দালাল চক্রের কবলে পড়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা, লুটেরা ও ষড়যন্ত্রে যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সারা দেশের মানুষ মাফিয়া বেষ্টিত সন্ত্রাসবাদ, শোষণ, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণে নিষ্পেষিত। এখানে আইন শৃঙ্খলাসহ সমাজের সকল স্তরগুলি মাফিয়া চক্রের প্রভাবে প্রভাবিত। দেশে অর্থনীতির উন্নয়নের ধারা চলমান থাকলেও সাধারণ মানুষের জীবন আজকে চালের বাজারে কাল পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা, পরশু যানবাহন শ্রমিকদের ধর্মঘট, এবং তার পরের দিন রেল যোগাযোগ বিপন্ন করে তোলার মধ্য দিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। দেশের অর্জিত সম্পদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বিদেশি ব্যাংকে জমা হচ্ছে ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। দেশের যুব সমাজ দেশপ্রেম এবং মানবতা বর্জন করে অর্থ ও অপশক্তির খেলায় নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে। এমতাবস্থায় সাম্প্রদায়িকতাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীরা রাষ্ট্রীয় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নীতিবর্জিত জোতদারি মুনাফাখুরি কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের প্রায়োগিক দূর্বলতার সুযোগে সমাজে দিন দিন মাদক বাণিজ্য, দূর্বল জনগোষ্ঠীর উপরÑ বিশেষ করে সংখ্যালঘু, আদিবাসী, নারী-শিশু নির্যাতনের মাত্রা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে চলেছে। অন্যদিকে বেকারত্ব শিক্ষা ব্যবস্থার বাণিজ্যিকিকরণ, নিয়োগ বাণিজ্য, মানবপাচার, অর্থ পাচার, দুর্বৃত্তায়নসহ জটিল পরিস্থিতিতে সামাজিক অস্থিরতা অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় দৃশ্যমান কোন প্রগতিশীল শক্তি না থাকায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান অর্জনকে দলতন্ত্র ও ব্যক্তিতন্ত্রে পর্যবসিত করছে এবং দেশবাসী প্রতিনিয়ত নানা সংকটে নিপতিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানান ধরনের বৈষম্য, সমাজে বিভাজন তৈরী করছে, সমকাজ সমমর্যাদা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে আজকের সমাবেশ এই পতাকা মিছিলের মধ্য দিয়ে আহŸান জানায় যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সু-সংহত রাখতে সরকারি রাজনৈতিক দলের পাশপাশি বিরোধী দলেও একটি শক্তিশালী অসাম্প্রাদায়িক, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান দেখতে চায়। সেই বিবেচনা থেকেই জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলার আহবানে
সকলে আওয়াজ তুলুন:
১. সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক, লুটেরা-মাফিয়া চক্রের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর
২. রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই
৩. ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমাবার উদ্দেশ্যে নতুন নীতিমালা গ্রহণ কর, সরকারি- বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য দূর করে সমতা আনতে হবে।
৪. দুর্নীতিবাজ, কালোটাকা, টেন্ডারবাজ, গডফাদারদের আইনের আওতায় এনে দ্রæত বিচার কর
৫. নারী-শিশু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু আদিবাসী নিপীড়ন বন্ধ ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন কর
৬. মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত কর
৭. আইনের শাসন নিশ্চিত ও গুম, হত্যা, নিপীড়ন বন্ধ কর
৮. শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থ সুনিশ্চিত করে কৃষি ও শিল্পবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন কর, শিক্ষাঙ্গনে দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ কর।
বার্তাপ্রেরক, সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক , সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন