সীমান্তে বিএসএফ সৈন্য নিহত; অনাকাঙ্খিত এক দুর্ঘটনা – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

১৮ অক্টোবর ২০১৯ – ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে এক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী নিহত হয়েছেন সে দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে রাজশাহী জেলা বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিএসএফের সৈন্য নিহত হবার কোন তথ্য প্রমাণ পায়নি বিজিবি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলছে, বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন ভারতীয় মৎসজীবিকে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বা বিজিবি আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ পেয়ে তারা যখন পতাকা বৈঠক করতে বিজিবি-র চৌকিতে গিয়েছিল, তারপরেই ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়।
বিএসএফ’র দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ডিআইজি এসএস গুলেরিয়া জানিয়েছেন, “বেলা ১০:৩০টা দশটা নাগাদ বাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পোস্ট কমান্ডার বিজিবি’র সঙ্গে পতাকা বৈঠক করতে যান।”
“বৈঠকের পরেও আটক ভারতীয় মৎসজীবিকে ছাড়তে রাজী হয়নি এবং বিএসএফ’র সদস্যদের ঘিরে ফেলতে শুরু করে বিজিবি সদস্যরা।”
মি. গুলেরিয়া বলেন, পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে বিএসএফ দল যখন স্পীডবোটে ফিরে আসছিল, তখন হঠাৎই বিজিবি সদস্যরা গুলি চালায়।
এ ব্যপারে রাজশাহী জেলা বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, “দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করেছে তাদের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। কিন্তু আমরা এর কোন তথ্য প্রমাণ পাইনি। এখন দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে।”
ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ঐ গোলাগুলিতে হেড কনস্টেবল বিজয়ভান সিংয়ের মাথায় গুলি লাগে, আর হাতে গুলি লাগে নৌকাচালকের।
মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মি. সিং মারা যান বলে তারা জানান।
এই ঘটনার পরে বিএসএফ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সেখানে গিয়েছেন।
ছবির কপিরাইট NurPhoto Image caption দুই দেশের সীমান্তে মাছ ধরাও বিরোধপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বিজিবি এবং বিএসএফ-এর মহাপরিচালকদের মধ্যে ফোনে কথাও হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই প্রসঙ্গে বিএসএফ’র অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সলিল কুমার মিত্র বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা অভূতপূর্ব ঘটনা। এর আগে কখনও পতাকা বৈঠকের সময়ে গুলি চালানোর ইতিহাস নেই।”
“পতাকা বৈঠক মানেই দুই বাহিনীর সম্মতি নিয়ে আলোচনা। সেখানে কেন বিজিবি গুলি চালালো, এটাই স্পষ্ট নয়। এরকম ঘটনা অনভিপ্রেত।”
এদিকে, বিজিবি কর্মকর্তা মিঃ মাহমুদ জানিয়েছেন, সীমান্তে এখন কোন উত্তেজনা নেই, তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
কী বলছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্খিত এক দুর্ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেনএবং জানিয়েছেন যে এই ঘটনার পর দুই বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ চলছে।
বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনার একটি বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ইলিশ নিষিদ্ধ মৌসুমে বাংলাদেশের জলসীমায় আটক করে রাখা এক জেলেকে বিএসএফ জোর করে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল।
কিন্তু বিজিবি এতে আপত্তি জানালে বিএসএফ তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার সময় গুলি ছোঁড়ে। এর জবাবে বিজিবিও গুলি ছোঁড়ে বলে মি. খান জানান।
শুক্রবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসে বিষয়টার সুরাহা করা হবে বলে তিনি জানান।
এই ঘটনা দু’দেশের সম্পর্কের ওপর কোন রেখাপাত করবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। – বিবিসি