স্টিফেন হকিং এর ৭ টি বিস্ময়কর তথ্য!

নবনী ইসলাম
গ্যালিলিওর মৃত্যুদিনে জন্ম ছিল তার, আইনস্টাইনের জন্মদিনে হল প্রয়াণ। স্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৮), বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞানীর জন্ম ও মৃত্যুও মেনে চলল যেন বিজ্ঞানের সূত্র মেনে। হকিং এর বডি অফ ওয়ার্ক নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো লিখে যেতে হবে অনন্তকাল তার চেয়ে বরং দেখে নেই চলুন স্টিফেন হকিংকে নিয়ে ৭ টি অবাক করা তথ্য।ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র ছিলেন হকিং- ৯ বছর বয়সে গ্রেডের দিক দিয়ে ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র ছিলেন হকিং। তার একমাত্র কাজ ছিল যন্ত্রপাতি খোলা আর জোড়া লাগানো। দারুণভাবে যন্ত্র খুলে ফেললেও জোড়া লাগাতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যেতেন তিনি। এভাবে নষ্ট করেছেন হকিং অনেক রেডিও, ঘড়ি। তবে এই কারণেই হকিং এর শিক্ষকরা ও সহপাঠীরা বুঝতেন যে হকিং এর মাঝে অসীম প্রতিভা লুকিয়ে আছে। তাই তো ক্লাসে তার নাম হয়ে গিয়েছিল আইনস্টাইন।
অঙ্কে ছিল ভালোবাসা, পদার্থবিজ্ঞানে মুক্তি- যদিও অক্সফোর্ডে যাবার পর হকিং এর বাবার ইচ্ছা ছিল তার ছেলে মেডিসিন মেজর নিয়ে পড়াশুনা করবে কিন্তু হকিং সবসময়ই চাইতো ম্যাথ মেজর নিয়ে পড়তে। কিন্তু তখন ম্যাথ মেজর সাবজেক্ট হিসেবে অধ্যয়ন করার সুযোগ না থাকায় হকিং চয়েস করেন ফিজিক্সকে। আর ফিজিক্সের মাঝেও তার চয়েস থাকে কসমোলজি।
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে- ক্যামব্রিজে পিএইচডি করার সময় ছুটিতে তার বোনের বান্ধবী জেন ওয়াইল্ড বেড়াতে এলে ভালো লেগে যায় হকিং এর। দুজনের ভালোলাগা প্রণয়ে পরিণত হয় খুব অল্প সময়েই। জেন মূলত আকৃষ্ট হয়েছিল হকিং এর সেন্স অফ হিউমার আর স্বাধীনচেতা মানসিকতা দেখে।
অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করার সময় প্রথম বর্ষে হকিং খুব একাকীত্ব বোধ করে। এই উদাসীনতা আর বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতেই সে জয়েন করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি রোয়িং ক্লাবে। যদিও শারীরিক ভাবে হকিং অনেকটাই দুর্বল ছিলেন কিন্তু নৌকা বাইতে অন্তত তাকে নেয়া হয়নি। তাকে নেয়া হয়েছিল কক্সওয়েইন হিসেবে যার মূল কাজ থাকে নৌকার স্টিয়ারিং ঠিক করা।
আর মাত্র ২ বছর বাঁচবে তুমি স্টিফেন! – গ্রাজুয়েশন শেষ করে বাড়ি আসা স্টিফেন হকিং ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখানোর পর আবিষ্কার করা হল যে হকিং স্কেলেরোসিসে আক্রান্ত, এই রোগীরা সাধারণত খুব দ্রুত নিজস্ব শরীরের সকল ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ডাক্তার বলে দেয় হকিংকে যে সে আর মাত্র ২ বছর হয়তো বাঁচবে। কিন্তু হকিং হতাশ হন নি, অসুস্থতার মাঝেই এঙ্গেজড হন তার প্রিয়তমার সাথে। বাঁচার আশাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল সেসময়।
এলিয়েন আছে!- স্টিফেন হকিং বিশ্বাস করতেন যে ইউনিভার্সের যে পরিমাণ বিশালতা তাতে এলিয়েন থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবার মতো নয়। তিনি বলেছিলেন যে- জীবন্ত প্রাণী থাকতেই পারে কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা নেই। হতে পারে তারা ডিএনএ বেইজড নয়। হতে পারে তারা তাদের গ্রহের সকল রিসোর্স শেষ করে নতুন গ্রহের সন্ধান শুরু করল। অথবা হতে পারে তারা কোন মিরর সিস্টেম দাঁড় করালো যার মাধ্যমে সূর্যের সকল শক্তি এক বিন্দুতে ফেলে ওয়ার্মহোল সৃষ্টি করে স্পেসটাইম ট্রাভেল করে পৌঁছে গেল পৃথিবীতে। অনেক কিছুই হতে পারে।
এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম- ১৯৮৮ সালে স্টিফেন হকিং এর লেখা ‘এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম’ বইটিতে উঠে এসেছে বিজ্ঞান স্বল্প বোঝা পাঠকদের জন্য সহজ ভাষ্যে বর্ণিত মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের ধারণা, উৎপত্তি, স্পেস, গ্রাভিটি, বিগ ব্যাং এর মতো থিওরিগুলো। এই বইটি গত ৩০ বছরে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ কোটি কপিরও বেশি। অনূদিত হয়েছে অসংখ্য ভাষায়।
স্টিফেন হকিং হয়তো নেই, কিন্তু তিনি থাকবেন তাঁর কাজে, তাঁর বেঁচে থাকার সংগ্রামে, তাঁর থিওরিগুলোতে।
(নবনী ইসলাম, রকমারি ডট কম)