২১ বছরে বিমসটেকের সাফল্য হাতে গোনা: হাসিনা

বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিমসটেকের সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো নতুন করে বিবেচনা করতে এবং জোটের কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷
নেপালের কাঠমান্ডুতে বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের জোট বিমসটেকের চতুর্থ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির পরও প্রতিষ্ঠার ২১ বছরে বিমসটেকের সাফল্য হাতে গোনা৷”

নেপাল থেকে ডয়চে ভেলে বাংলার কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর সম্মেলনে দেয়া শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাই লাভবান হতে পারে এমন বেশ কয়েকটি উদ্যোগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্র্রধানমন্ত্রী৷ তার একটি হলো, বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের মাধ্যমে জোটভুক্ত সাত দেশকে যুক্ত করা৷
বিমসটেকের সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো নতুন করে বিবেচনা করতে এবং সেজন্য জোটের কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷
বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “এই যৌথ চেষ্টাকে অর্থবহ সম্পর্কের রূপ দিতে চাইলে, সহযোগিতার দৃশ্যমান ফলফল চাইলে আমাদের মৌলিক আইনি কাঠামোগুলোকে আরও সংহত করার কথা আমাদের ভাবতে হবে৷”
বিমসটেক ফোরামের মাধ্যমে একটি যৌথ অর্থায়ন কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা৷
এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়৷ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির উদ্বোধনী বক্তব্যের পর বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন৷ সেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কর্মতৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়৷
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে বাংলার কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর৷ করিম বলেন, ‘‘দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন৷”
শেখ হাসিনা এ সময় আরো যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তার মধ্যে নেপালকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটিও ছিল৷
নেপালের প্রধানমন্ত্রী এ সময় দুই দেশের সহযোগিতার আরো যেসব জায়গা আছে, সেগুলো খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দেন বলে জানান প্রেস সচিব৷
তিনি আরো জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে নেপাল থেকে বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ এ বিষয়ে একটি সমঝোতা আগেই স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ ‘‘এছাড়া বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বাড়ানোর বিষয়েও শেখ হাসিনা গুরুত্বারোপ করেছেন,” বলে জানান প্রেস সচিব৷
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্রসচিব, নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব৷
এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাশো শেরিং ওয়াংচুক৷ বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান ইহসানুল করিম৷
দুই দিনের এই সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও বৈঠক হবার কথা রয়েছে৷
এর আগে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে৷
নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান৷
প্রধানমন্ত্রীকে নেপালের সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করে৷
অভ্যর্থনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীকে একটি সুশোভিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাহাচেল মার্গ এলাকায় হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হয়৷
উল্লেখ্য, ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন’ বা বিমসটেক হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের একটি জোট৷ ১৯৯৭ সালে ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এ উদ্যোগের সূচনা করে৷ পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান বিমসটেকে যোগ দেয়৷ এবারের বিমসটেক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘শান্তির, সমৃদ্ধির, টেকসই বে অব বেঙ্গলের লক্ষ্যে’৷-ডয়চে ভেলে বাংলা