কুমিল্লায় শচীন দেব বর্মনের বাড়িকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করুন

মোতাহার হোসেন
সেদিন ৩১অক্টোবর, অনেকটা নিরবে চলে গেল তার মৃত্যু দিবস।কেউ,কোন প্রতিষ্ঠান দিনটি পালন করেনি; শ্রদ্ধায় অবনত হয়নি কারো মস্তক।স্মরণ করেনি কেউ এই মহান ব্যক্তিত্বকে।হ্যাঁ আমি উপমহাদেশের কিংবদন্তীতুল্য সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মনের কথা বলছি।

Sachin Dev Barmon2
Sachin Dev Barmon2

বিংশ শতাব্দীর বাংলা ও হিন্দী গানের বিখ্যাত সংগীত পরিচালক, সুরকারও লোক সংগীত শিল্পী শচীনদেব বর্মনের মৃত্যু দিবস ৩১ অক্টোবর। ১৯৭৫ সালের এইদিনে তিনি মৃত্যু বরন করেন।
১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে তার জন্ম।বেড়েউঠাও এই কুমিল্লাতেই।ত্রিপুরার মহারাজ পরিবারের সন্তান। প্রায় ৬০ একর জমি নিয়ে কুমিল্লার চর্থায় প্রাষাদ নির্মাণ করে ছিলেন সচীনের পিতা কুমার বাহাদুর নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মন। সে প্রাষাদে শচীনের জন্ম এবং বেড়ে উঠা।
শচীনকে ঘিরে আবর্তিত হতো কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা এ বাড়িতে আসতেন; তন্মধ্যে কবি নজরুল ও ছিলেন। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল কুমিল্লায় অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। বস্তুত মুম্বাই পাড়ি না দেয়া পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জগতের মধ্যমনি।
একেত রাজপরিবার তারউপর বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র ছিলেন ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রী; তিনি চাইলেই বড় কোন সরকারি পদ নিয়ে আয়েশে জীবন কাটাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে কঠোর সংগীত জীবন বেছে নেন।বিয়ে করেন আরেক বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ মীরা দেব বর্মন কে। মীরা দেব বর্মনের লিখা অনেক গুলো গান শচীনের কন্ঠে জনপ্রিয়তার তুংগে উঠেছিল। তার কয়েকটি হলঃ-তাকদুম তাকদুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল , শোন গো দক্ষিণ হাওয়া, বর্নে গন্দ্বে ছন্দে গীতিতে হৃদয় দিয়েছ দোলা,নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক;আরো অনেক , বলে শেষ করা কঠিন।
প্রায় ১০০বছর পরও বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে তার গানের আবেদন অটুট আছে। শচীন দেব বর্মন এস ডি বর্মন নামে খ্যাত ছিলেন। নিকট জনেরা কেউ কেউ তাকে শচীনকর্তা ও ঢাকতেন।
রাহুল দেব বর্মন , আর,ডি,বর্মন নামে পরিচিত, উপমহাদেশের আরেক বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ সচীন দেবেরই পুত্র।আর ডি বর্মন বিয়ে করেছিলেন আরেক বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ আশা ভোসলে কে।
কুমিল্লার প্রাষাদোপম বাড়ির কথা বলছিলাম; এ বাড়িতে এসেছিলেন কাজী নজরুল, সুর সাগর হিমাংশু দত্ত,সুধীন দাস।চলচ্চিত্রকার সুশিল মজুমদার, জীতুদত্ত সহ প্রাতঃস্মরণীয় বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি। আড্ডা বসতো।আড্ডার পর ভেসে আসতো নজরুল, শচীনের গান।
সংগীত পরিচালক হিসেবে ও শচীন দেব ছিলেন সার্থক। বহু জনপ্রিয় হিন্দী চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ছিলেন এসডি বর্মন।
কিছুদিন আগে খবরের কাগজ এ দেখেছি এ বাড়িতে মুরগীর খামার!এখন কি অবস্থায় আছে জানিনা। বাড়িটি উদ্বার করে এখানে কি জাদুঘর করা যায়না? পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্বার করা যদি সম্ভব হয়, তাহলে শচীন দেবে’র ক্ষেত্রে এ আচরণ কেন? শচীন দেব বর্মনের বাড়িতে মুরগির খামার! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।এতো অবহেলা কেন?
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে, এখন আর কালক্ষেপণ না করে বাড়িটা উদ্দার করে সেখানে জাদুঘর করা যেতে পারে; ললিত কলা কেন্দ্র, (fine arts centre) করা যেতে পারে। কুমিল্লার সুধীজন এ ব্যপারে উদ্যোগ নিতে পারেন।।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিল্যাঞ্চ সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ)