গৃহকর্মীর উপর অত্যাচার বন্ধ করুন

মোতাহার হোসেন
রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশের শহরে বন্দরের বাসাবাড়িতে কাজের লোক বা ঝি চাকর রাখার প্রচলন আছে। যাদের আমরা বলি গৃহকর্মী। বাধা কর্মী বেশির ভাগই শিশু কিশোরী।এদের প্রয়োজন যে কতখানি তা, দুদিন এরা না থাকলেই বুজা যায়,কত ধানে কত চাল। আসলে এদের ছাড়া ১ দিন ও চলেনা।এদের প্রয়োজন বেশি বলেই, লক্ষ লক্ষ গৃহকর্মী, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক, বাসাবাড়িতে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। বেশিরভাগ গৃহবাসী, কর্তা কিংবা গিন্নি এদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন, এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। তা না’হলে হাজারো গৃহকর্মী বছরের পর বছর এ কাজে নিয়োজিত থাকতে পারতো না।
এর ব্যতিক্রম আছে, ব্যতিক্রম হচ্ছে কিছু সংখ্যক দুরাচার গৃহকত্রী, কখনো কখনো গৃহকর্তাও, এসব গৃহকর্মীদের সাথে কারনে অকারনে অথবা তুচ্ছ কোন কারনে দুর্ব্যবহার করেন, মারধর করেন, নির্যাতন করেন শারীরিক ভাবে।এদের নিষ্ঠুরতা মাঝে মধ্যে এতই নির্মম ও অমানবিক হয় যে ভাবতেই গা শিউরে উঠে। বিশেষ করে শিশু এবং কিশোরীদের উপর এ অত্যাচার হচ্ছে ভয়াবহ। এসব গৃহকর্ত্রীর অনেকই আবার শিক্ষিতা!ধিক এদের শিক্ষার।
সংবাদপত্রে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা প্রায় দেখতে পাই শিশু কিশোরীদের উপর অত্যাচারের নগ্ন রুপ। এসব নিষ্ঠুর চিত্র দেখে আমরা আঁতকে উঠি।এ অমানবিক নির্মমতা দেখে হতবাক হই।মানুষ কি ভাবে এতো টা নিষ্ঠুর হতে পারে ভেবে আকুল হই। কিন্তু প্রতিকারে এগিয়ে আসিনা।
আমরা সবাই জানি গৃহকর্মীদের কোন সার্ভিস রুল নাই।আপনার যদি মনে হয়, একে দিয়ে কাজ চলবে না; এ অবাধ্য অথবা আপনার যদি এ রুপ মনেহয় যে এর কাজ সন্তোষজনক নয় তবে আপনি সহজেই মাত্র ২/১ দিনের নোটিশে তাকে বিদায় করে দিতে পারেন।এর জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও দিতে হবেনা,বাড়তি টাকা ও গুনতে হবেনা। যার সার্ভিস রুলই নাই তার আবার প্রভিডেন্ট ফান্ড!গ্রেচুইটি!!আসলে ওরা খুব নীরিহ , নীরিহ বলেই অত্যাচারের মাত্রাটাও বেশি।
অবাধ্য গৃহকর্মী কে রাখতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই। অথচ আপনি তা না করে তাকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করছেন; তার সাথে পশুর মতো আচরণ করে নিজের পশুত্ব জাহির করছেন।যারা এসব করছেন তারা পশুর থেকেও অধম।বিবেকহীন।
এদের প্রতিরোধের জন্য শুধু পুলিশ ও আইনি ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়, চাই সামাজিক প্রতিরোধ ও সামাজিক সচেতনতা।।কারন পুলিশতো অপরাধীর বাসাবাড়িতে পৌছাতে পারবেনা অথ্যাৎ পুলিশত খবরই পাবেনা যতক্ষণ প্রতিবেশী কেউ পুলিশকে ইমফর্ম না করবে; সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সাহায্য না করবে।
তাই, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যেমনি প্রয়োজন পুলিশকে সাহায্য করা তেমনি প্রয়োজন আদালতে স্বাক্ষ দান করে আইনি প্রক্রিয়া সুসংহত করা। একই সাথে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় তোলা। নিকৃষ্ট কিছু অপরাধীর হাত থেকে শিশু কিশোরী গরীব পিতামাতার সন্তান অথবা এতিম সন্তানদের বাচানোর জন্য সমাজ কে এগিয়ে আসতে হবে।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিলাঞ্চ সাংবাদিক এবং সাবেক পরিচালক, আইডব্লুটিএ)