চাষীরা পন্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না; শোষিত হচ্ছে

মোতাহার হোসেন
বাংলাদেশের চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে, ভোক্তারা পণ্য পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্যে কিনতে।দেশের প্রান্তিক চাষী, যারা সরাসরি ফসল উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত, তারা লোকসান দিচ্ছে। অন্যদিকে ভোক্তারা কৃষিজাত দ্রব্যাদি কিনছে কয়েকগুন বেশী মূল্যে। তেলের দাম বৃদ্ধি, সার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী বৃদ্ধি সব মিলিয়ে উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রতিকূল জলবায়ু, প্রাকৃতিক দূর্যোগ উপেক্ষা করে, রোদ বৃষ্টির মধ্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, তারা ফসল বুণে। কিন্তু, এত কষ্টের ফসলের পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্য। অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ, তা বোঝার জন্য দুইটি উদাহরণ তুলে ধরছি:-
একবার খবরের কাগজে দেখলাম, ময়মনসিংহের গ্রামের দিকে এক টাকায় চার হালি মূলা বিক্রি হচ্ছে। পরদিন ঢাকার বাজারে গিয়ে দেখলাম মূলা বিক্রি হচ্ছে এক হালি পাঁচ টাকা।
সবজি বিক্রেতার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে, সে বলে, “স্যার, কৃষকরা যদি বিনে পয়সায়ও দেয়, তবুও আমাদের হালি পাঁচ টাকা করেই বিক্রি করতে হবে। কারণ আমাদের খরচই পরে তিন/চার টাকা করে”।
আরেকবার কাগজে দেখলাম এক কৃষক, এক ট্রাক আলু নিয়ে, মোকামে বিক্রি করতে আসে। পরে আলু সমেত ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়। ট্রাক ড্রাইভার তাকে, খোঁজার জন্য পুলিশের সাহায্য নিয়েও তখন সেই কৃষককে পাওয়া যায় নি। পরে অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, যে মূল্যে সে আলু বিক্রি করতে পারত, ওইটাকায় ট্রাক ভাড়াও হয় না। এমতাবস্থায় আলু ফেলে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া তার সামনে কোন বিকল্প ছিল না।
এই দুইটি খন্ড চিত্রে প্রতীয়মান হয়, অবস্থা কতটাই ভয়াবহ। অথবা বলা যায়, বাস্তব অবস্থা বোঝার জন্য এই চিত্রই যথেষ্ট। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের কৃষকরাও রাস্তায় দুধ ঢেলে দিয়ে, তাদের মত করে প্রতিবাদ করেছে। যশোরের কোন এক জায়গায়, রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে দিয়ে ট্রাক দিয়ে মাড়িয়েছে। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের কল্যাণে আমরা এসব দেখেছি। কিন্তু এসব প্রতিবাদে সমস্যার কোন সমাধান হয় নি। কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ের খরচই উঠছে না অনেকক্ষেত্রে, লাভ তো সূদূর পরাহত।
কিনতু তাই বলে কি ভোক্তাতারা কম দামে পাচ্ছেন? না তাও পাচ্ছেন না। প্রান্তিক চাষীরা যখন বেগুন বিক্রি করে কেজি দুইটাকা, শহরে আমরা ওই বেগুন কিনছি কেজি ২০ টাকা। এতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই শোষিত হচ্ছে। এর কারণ সড়ক পরিবহনের নৈরাজ্য। তিন হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া বেড়ে হয়েছে, চাঁদাবাজীসমেত ৩০ হাজার টাকা।
সড়ক পথে বাস ড্রাইভারদের নৈরাজ্য তো আছেই। এর উপর, মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত দৌরাত্ব বেড়েছে ট্রাক ড্রাইভারদের। সাথে আছে মুনাফাখোর সিন্ডিকেট। পরিবহণ শ্রমিকদের চাঁদাবাজী, পুলিশের চাঁদাবাজী, মাস্তানদের চাঁদাবাজী, আরো কত কি! সবমিলিয়ে ত্রাহি মধূসুদন অবস্থা।
(লেখক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক বিআইটিএ)