চায়ের পেয়ালায় ঝড় চলছে

মোতাহার হোসেন‌
চায়ের দোকানে আড্ডা। চায়ের পেয়ালায় ঝড় চলছে। আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কষ্ট, মানুষের কষ্ট। ঘর থেকে বের হলেই কষ্ট, ঘরে থাকলেও কষ্ট, রিক্সায়-বাসে-ফুটপাথে-হাঁটবাজারে কষ্ট। প্রতিদিন পাখির ছানার মত মানুষ মরছে রাস্তা ঘাটে। বিচার নাই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেখভালের কেউ নেই। বেঘরে মেয়ে মানুষ পেলে কি শিশু কি বুড়ি, কারো নিস্তার নেই, ধর্ষিত হচ্ছে। কোন প্রতিকারও নেই।কিছুদিন থেকে বাস ওয়ালাদের উপদ্রপ এতটাই বেড়েছে যে মানুষ মেরে ফেলা, হাত বা পা ভেঙে দেওয়া, সুযোগ পেলে ধর্ষণ করা, সবই চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। পত্রিকাওয়ালারা লিখতে লিখতে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন। লেখারও জোর হাড়িয়ে ফেলেছেন। কষ্টের কথা গুলো তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গুরুত্ব পাচ্ছে সিটি করপোরেশান নির্বাচন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সেখানে তো যা হওয়ার তাই হয়েছে, মনজুর সাহেব জেলখাটা থেকে বেঁচে গেছেন। জিতলে তো গাজিপুরের মান্নানের মত খবর ছিল। তো যা হওয়ার তাই হয়েছে। এতে আবার নতুনত্বের কি আছে!
এরকম বিচ্ছিন গসিপের ভিতর দোকানে প্রবেশ করলেন, আমাদের মুন্সী চাচা। প্রবীণ সাংবাদিক। সবাই একযোগে উনার কাছে জানতে চাইলেন, কষ্টের কথা। চাচা, আমাদের কষ্ট কি শেষ হবে না? চাচা বললেন, তাহলে একটা গল্প বলছি শোন। চাচা গল্প বলতে শুরু করলেন-
‘গল্পটি ঢাকার নয় কলকাতার। কলকাতার এক শিক্ষিত দম্পতি। বছরখানিক আগে বিয়ে হয়েছে। কষ্টের শেষ নাই। চাল থাকে তো ডাল থাকে না। ডাল থাকে তো পাক করার কেরোসিন থাকে না। এতসব কষ্টের মধ্যে দিন যাপন, একদিন স্বামী-স্ত্রী উভয়ই গেলেন জোতিষীর কাছে। কলকাতার এক বিখ্যাত জোতিষীর কাছে জানতে চাইলেন, বাবা, আমাদের কষ্টের কি শেষ হবে না? আমাদের ভাগ্য গণনা করে দেখুন তো, আমাদের কষ্ট কবে শেষ হবে। কলকাতার বিখ্যাত এই জোতিষী, দশাসই চেহারা, বিশাল চেম্বার, পদ্মাসনে বসে ভাগ্য গণনা করেন। সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্র এবং তাদের গতিবিধি তার তঠস্ত।
জোতিষী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন উনাদের। তার পর হাতের ছাপ, দুজনেরই চার হাতের ছাপ। দুইজনেরই কুষ্টির বর্ণনা নিলেন, জন্ম তিথি, পূর্বপুরুষদের ইতিবৃত্ত ইত্যাদি। তারপর বললেন, ফি’টা রেখে চলে যান। কাল এসে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন বিকেল পাঁচটার পর। পরদিন তো দম্পত্তির আর তর সয় না। ঠিক পাঁচটায় হাজির, সাড়ে পাঁচটার দিকে ওদের ডাক পড়ল জোতিষীর চেম্বারে। জোতিষী রিপোর্ট দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আরো তিন মাস কষ্ট হবে, মাস তিনেক। দম্পত্তি তো মহা খুশি। তবে কি চাকুরির প্রমোশন হবে? জোতিষী: না। তবে কি লটারিতে টাকা পাওয়া যাবে? জোতিষী বললেন, না, না, ওসব কিছু না। ওরকম কিছু হবে না। স্বামী স্ত্রী একই সাথে জানতে চাইলেন, তবে? তবে কি হবে বাবাজি? জোতিষী বললেন, “ততদিনে কষ্ট সহ্য হয়ে যাবে, আর কষ্ট লাগবে না”’।
.(মোতাহার হোসেন‌, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ)