টেকসই উন্নয়নের জন্য অববাহিকা ভিত্তিক নদীব্যবস্থাপনা জরুরীঃ আইএফসি

ঢাকা, ২৫ জুন – টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো (এসডিজীজ) অর্জনের স্বার্থে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা টেকসই হওয়া দরকার। এজন্য যৌথ সকল নদীর অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন অন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি) নিউ ইয়র্ক – এর মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মধ্যাহ্নভোজের সময় তিনি প্রধান মন্ত্রীকে বাংলাদেশের নদী খনন করে পানি ধরে রাখার উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, একাজ কৃষি এবং মৎস উৎপাদনে সহায়ক হবে। তবে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়নের জন্য যৌথ নদীগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
তিনি উল্লেখ করেন, মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নদীগুলো খনন করে বাংলাদেশের পানি সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়ে বলেছেন, বর্ষাকালে উপমহাদেশের সকল নদী বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই বিশাল পানি প্রবাহের কিছু জলাধার নির্মান করে ধরে রাখতে পারলে অন্যদের উপর পানির জন্য নির্ভর করতে হবেনা। বাজেটে নদী খননের জন্য টাকা বরাদ্ধও রাখা হয়েছে।
সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, আমরা নদী খননের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সাথে সাথে বাংলাদেশের নদীগুলো যেন বেঁচে থাকে সেজন্য প্রধান মন্ত্রীকে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক উদ্যোগ নেবার আহবান জানাচ্ছি।
মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইএফসি বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পানি বিষেষজ্ঞ ডঃ এস,আই খান এবং আইএফসি সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন আইএফসির সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান আতা। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউএনবির বিশেষ সংবাদদাতা সদরুল হাসান, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম আজাদ, নয়াদিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ ও দিনকালের বিশেষ সংবাদদাতা আলী মামুদ।
বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর শতকরা ৯০ ভাগ পানি উজান থেকে আসে। অববাহিকা ভিত্তিক সমন্বিত ব্যবস্থাপনা উপেক্ষিত হলে আজ হোক কাল হোক এ নদীগুলো মরে যাবে। এই উপলব্ধি শুধু বাংলাদেশের পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের নয়, খোদ ভারতের বিশেষজ্ঞদেরও।
ভারতের সুপ্রীম কোর্ট সেদেশের একাধিক নদীকে জীবন্ত-স্বত্বা ঘোষনা করেছে। বাংলাদেশের হাইকোর্টও এমন একটা নির্দেশনা জারী করেছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে অগ্রগতি হচ্ছেনা।
গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হবে। প্রাকৃতিক এই নদীর পানি সীমান্তে বন্টনের পুরোনো চিন্তা এখন বেঠিক প্রমানিত হয়েছে। কারণ নদীর উৎস থেকে সাগর পর্যন্ত টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রবাহমান না রাখলে সীমান্তে পানি আসবে না। উজানে অপরিনামদর্শি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
সকল নদী স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত না হলে, বাংলাদেশে মিঠাপানির পরিবেশ থাকবেনা। নোনাপানি দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মত দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে উদ্ভিতও জীববৈচিত্র ধংস করে ফেলবে।
ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতিতে অতিরিক্ত বলে কিছু নেই যে এক নদীর পানি অন্য নদীতে নিয়ে টেকসই উন্নয়ন করা যাবে। প্রকৃতিতে সব কিছু একটা ভারসাম্যও সামঞ্জস্যপূর্ন (equilibrium) অবস্থায় থাকে। এই সামঞ্জস্যপূর্ন অবস্থা ব্যাহত হলে পরিবেশগত বিপর্যয় অনিবার্য। যা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে দৃশ্যমান।
আমরা মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী এবং তাঁর সরকারকে আহবান জানাই। এসডিজি তথা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যেখানে সারা বিশ্ব একহয়ে কাজ করছে, সেখানে যৌথ নদীগুলোর স্বল্পমেয়াদী, অপরিনামদর্শি পানিব্যবস্থাপনা উপমহাদেশের সকল জনগোষ্টির জন্য অকল্যান ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে। যার লক্ষণ এখনি দেখা যাচ্ছে। আগে থেকে উদ্যোগ নিলে এই মানবসৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব।