নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ স্মরণে তমদ্দুন মজলিসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিস ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর ১০৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও দোয়া মাহফিল গতকাল বিকাল-৫টায় ঊমা কাজী সেমিনার কক্ষ, নজরুল একাডেমী, মগবাজার, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।তমদ্দুন মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতি জনাব মুহম্মদ আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও নজরুল একাডেমীর সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক জনাব মিন্টু রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল কমিটির সম্মানিত সভাপতি জনাব সৈয়দ নাসরুল আহসান ও নওয়াব সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জনাব এডভোকেট রুহী শামসাদ আরা। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহন করেন জনাব কবি শাহ সিদ্দিক, কবি নাছির হেলাল, জনাব এমদাদুল হক চৌধুরী, কবি হাসান আলিম ও মোহাম্মদ তাওহিদ খান প্রমুখ। কবিতা পাঠ করেন, কবি জাফর পাঠান, কবি মোহাম্মদ হোসেন আদর, জনাব আনিস ফাতেমা ও কবি আবদুস সালাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, তমদ্দুন মজলিস ঢাকা মহানগরের সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক কর্মী জনাব এম এইচ সুজন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন, নওয়া সলিমুল্লাহ ঢাকা বিভাগীয় স্যাভেজ ঢাকা নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এতে ব্যয় ধরা হয় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। সরকার ত্রিশহাজার টাকা বরাদ্দ করে। নওয়াব সলিমুল্লাহ বাকি একলক্ষ টাকা ও জমি দান করলে ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “ঢাকা স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯০৮ সালে নওয়াব সলিমুল্লাহ আরো অর্থ দান করে পিতার নামে স্কুলটির নাম করণ করেন। “আহসান উল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং”। ১৯৪৭ এর পর স্কুলটি কলেজে উন্নীত করা হয়। মুসলিম লীগ সরকার ১৯৬২ সালে কলেজটির উন্নতি করে প্রতিষ্ঠা করে ‘পাকিস্তান প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, যা তদানীন্তন প্রদেশের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটির নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ( বুয়েট)। নওয়াব সলিমুল্লাহর দান করা জমিতে বুয়েট প্রতিষ্ঠিত।
বক্তারা আরো বলেন, নওয়াব সলিমুল্লাহ প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন এবং ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব মেনে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দান করেন। পুর্ববঙ্গের অবহেলিত মুসলমানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ৬০০ একর জমি দান করেছেন। তিনি জমি দান না করলে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নও আমরা দেখতে পারতাম না। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করে না। এটা আসলে একটা জাতির জন্য দুঃখজনক। বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এই গুণী ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জনান।
বক্তারা বলেন, দেশের অনুন্নত মুসলমান সমাজকে শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নওয়াব সলিমুল্লাহর অবদান ছিল অবিস্মরনীয়। এতিম মুসলিম ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ১৯০৮ সালে আজিমপুরে ২৮ বিঘা জমি দান করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব সলিমুল্লাহ এতিম খানা। যেখানে শত শত এতিম ছেলে মেয়েদের যাবতীয় ব্যয় নওয়াব সলিমুল্লাহ মৃত্যুকাল পর্যন্ত নিজ তহবিল থেকে খরচ করে গেছেন। এটিই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এতিমখানা।