নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ব্যাপকতা বাস্তব সমাধান কী?

শাহ্ আব্দুল হান্নান
বাংলাদেশে সব সমস্যাই বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক সমস্যা, অপরাধ, সর্বব্যাপী দুর্নীতি, নদীদূষণ, পরিবেশদূষণ, অবাসযোগ্য শহরাঞ্চল ও ট্রাফিক জ্যাম। আজ কেবল নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণ, বখাটে কর্তৃক মেয়েদের রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করা, তাদের স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়া, মেয়েদের অপহরণ করা এবং পরে জোরপূর্বক বিয়ে করা, ধর্ষণ, হত্যা ও লাশ গায়েব করে ফেলা ইত্যাদির ওপর আলোচনা করব।সারা দেশেই মেয়েরা বখাটেদের অত্যাচারে স্কুলে যেতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, কিছু মেয়ে স্কুলে যেতেই পারে না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। বখাটেরা অনেক সময় কিছু ছাত্রনেতার সহায়তা পায়। এ সমস্যার দেশব্যাপী সমাধান দরকার; কী করা যায়, পরে বলছি।
ধর্ষণ যে কী ব্যাপক হয়ে দাঁড়িয়েছে তা সবাই জানি। এই জঘন্য অপরাধ শহর-গ্রাম সবখানেই হচ্ছে। ধর্ষকদের পরিচয় কী? তারা শহরাঞ্চলের অপরাধী ধরনের লোক। অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতাহীন বড় লোকের সন্তান ও বয়ফ্রেন্ড হয়ে থাকে। বয়ফ্রেন্ডরা তাদের হোটেলে জন্মবার্ষিকীতে দাওয়াত করে। সেখানে অনেক সময় বয়ফ্রেন্ড বা তাদের বন্ধুরা একা বা দলবেঁধে ধর্ষণ করে থাকে। কিছু হোটেলে এগুলো বেশি হচ্ছে। হোটেলমালিকেরা জেনেই তাদের সাহায্য করে অথবা হোটেল বয় তাদের সাহায্য করে। হোটেলে ধর্ষণ বন্ধ হতে পারে যদি পুলিশ সতর্ক থাকে। এ ব্যাপারে বিশেষ টিম থাকতে পারে তাদের। গ্রামাঞ্চলের বখাটেদের সমস্যা অনেক বড় এবং দেশব্যাপী। এরাই মেয়েদের স্কুলে যেতে, চলাচল করতে বাধা দেয়। এরাই ধর্ষণ করে। ৮০ ভাগ ধর্ষণ উপজেলাপর্যায়ে এবং গ্রামাঞ্চলে সংঘটিত হচ্ছে। ধর্ষকদের মধ্যে কিছু অসৎ নেতা ধরনের লোক থাকতে পারে।
যা হোক, এ সমস্যা সমাধান করতেই হবে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন চলতে পারে না কিছুতেই। দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষায় নৈতিকতা পুনর্বহাল করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের দায়িত্ব রয়েছে এ ক্ষেত্রে। আমি সে সবে না গিয়ে একটি বাস্তব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, যা দ্রুত সুফল দেবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে (এমনকি কিছু গ্রামে) নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে। তাদের দায়িত্ব হবে এলাকার বখাটেদের ওপর নজর রাখা, স্কুলের সামনে প্রয়োজনে অবস্থান করা। তাদের মধ্যে কিছু বয়স্ক মুরব্বি, কিছু শিক্ষক, কিছু মহিলা নেত্রী, কিছু ইমাম থাকতে পারেন। এগুলো সংগঠিত করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। কমিটির সদস্যদের কোনো ফি দিতে হবে না। এটা স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে করতে হবে। এটাকে গুরুত্বের সাথে কার্যকর করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। এর বাইরে, এ ক্ষেত্রে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। তারা উল্লিখিত কমিটিকেও সাহায্য করবে। অবশ্য সারা দেশেই ধর্ষণ প্রতিরোধে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেহেতু ধর্ষণের শিকার হন নারীরা এ জন্য কিছু সতর্কতা বিশেষ করে নারীদের নেয়া উচিত। তাদের পোশাক শালীন হওয়া প্রয়োজন। সবার উচিত ফ্রি মিক্সিং (নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা) পরিহার করা। কিছু স্থানে ও সময়ে একা না চলা এবং কোনো পুরুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস না করা।
আমাদের জানতে হবে যে, মহান স্রষ্টা পুরুষ ও নারীর মধ্যে শক্ত যৌন আবেগ দিয়েছেন। এ জন্যই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। আমরা দেখেছি যে, কিছু খ্রিষ্টান পাদ্রি, হিন্দু গুরু বা মুসলিম ধর্মীয় ব্যক্তিও যৌন অবাধ্যতায় জড়িয়ে পড়েন। কারো ভাবা উচিত নয় যে, তিনি সব পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারবেন। সুতরাং সতর্কতা সবারই প্রয়োজন।
(২৬ অক্টোবর ২০১৭,বৃহস্পতিবার, ১৭:০৮। লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার E.m: harunrashidar@gmail.com)