বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা

কাজী কামাল
বাংলাদেশের সাধারন মানুষ মূলতtএক অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে তাঁদের দিনগুলি অতিবাহিত করছে। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। মানবজাতির জন্ম থেকে অদ্যবধি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জাতি, গোষ্ঠী, এবং দেশ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা ও গবেষণা করে নিজেদের জন্য, দেশের জন্য যা মঙ্গল তা গ্রহন করেছে এবং যা অমঙ্গলের কারন হবে তা পরিহার করেছে। আমাদের দেশে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সহ অন্যান্য দলগুলি যার যার মত প্রকাশ কপ্রছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একটাই কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে এবং আওয়ামী শিবিরের সাধারন কর্মীদেরও বিশ্বাস আগামী নির্বাচন ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির মতই হবে| বি এন পি নির্বাচনে আসলেও যেভাবেই হোক আওয়ামীলীগই সরকার গঠন করবে। অপরদিকে বিরোধী বি এন পি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সাধারণ কর্মীরা হতাশায় ভুগছে , কারন গত পাচ বছর বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের কর্মীরা নানান মামলা
মোকদ্দমা, গুম, হত্যার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। বিএনপির সাধারন কর্মীদেরও ধারনা আওয়ামীলীগ জোরজবরদস্তি করে এবারও ভোট নিয়ে যাবে এবং সাধারন
মানুষেরও একই কথা । আমরা মনে করি সরকারের দলের নেতা কর্মীদের বক্তব্য এবং চিন্তা – ভাবনা যেমন একগুঁয়েমির মনোভাব প্রকাশ করে অপরদিকে বিরোধী
দলের নেতা কর্মী ও সাধারন মানুষেরও চিন্তা- ভাবনাতে এক ধরনের হতাশার ভাব প্রকাশ করে , যা একটি দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত। অশনি সঙ্কেতের
শেষ পরিনতি কি হতে পারে তা বর্তমান সিরিয়ার দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই কিছুটা আঁচ করা যাবে। তাই আমরা মনেকরি বাংলাদেশে আগামিতে একটি সুষ্ঠু
সাধারন নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিম্নে পেশ করিলাম। দেশের প্রায় নয় কোটি ভোটারের জন্য
সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার একমাত্র দায়িত্ব একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ মোট পাচজন কমিশনারের নয়। তারসাথে নিরবাচন কালীন
সময়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতায় যারা থাকেন তাঁদের স্বদিচ্ছার উপরই নিরভর করে অনেক কিছু অথবা সবকিছু।পূর্বে দেখা গিয়েছে জাল ভোট ঠেকাতে
সরকার বিভিন্ন বাহিনীর কথা ঘোষণা করলেও একমাত্র দু’চারজন পুলিশ আর আনসার ছাড়া কাউকে দেখা যায়না, আর striking force হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় , তাদেরকে ফোন করে সময় মত পাওয়া যায়না, যার ফলে যা হবার তাই হয়, সত্যিকারের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিম্নে কতগুলি প্রস্তাবনা পেশ করছি
,আশাকরি জাতীর নীতি-নির্ধারকেরা ভেবে দেখবেনঃ
১। নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে ছয়টি বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে।
২। যেহেতু আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা অপ্রতুল সেহেতু দেশের ছয়টি বিভাগে ছয় দিনে নির্বাচন করতে হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ , আনসার ,বিজিপি ও সেনাবাহিনীর কমপক্ষে দশ জন সদস্য ভোটারদের নিরাপত্তা সহ জাল ভোট নিয়ন্ত্রণের দাওয়াই থাকবে। striking force টহলে থাকবে।
৩। Presiding officer, assistant presiding officer এবং polling officerনিয়োগ দিতে হবে অন্য জেলা থেকে , কেননা অনেক সময় দেখা গিয়েছে পরিচিতির
কারনে এরাও মাঝে মধ্যে জাল ভোট প্রদানে সহযোগিতা করে থাকে অথবা অসহায়তা প্রকাশ করে।
৪। ভোট বাক্স সিল-গালা মারা অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে চলে যাবে, সবকেন্দ্রের ভোট বাক্স একটি তালাবদ্দ নিরাপদ ঘরে থাকবে এবং ভোট বাক্সের ঘরটি তিন বাহিনীর যৌথ টীম পালাক্রমে পাহারা দিবে। প্রয়োজনে প্রার্থীদের মনোনীত ব্যক্তিরাও ঐ টীমের সাথে পাহারায় থাকতে পারে।
৫। সব আসনের ভোট গননা হবে একইদিনে সব প্রার্থীদের প্রতিনিধি , সব কেন্দ্রের Presiding officer, assistant presiding officer এবং polling
officer নির্বাচনী কর্মকর্তা , সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং তিন বাহিনীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে। নিরাপত্তার দাইয়িত্বে থাকবে তিন বাহিনীর যৌথ টীম।
৬। জাল ভোট প্রদানকারীকে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা জরিমানা সহ কমপক্ষে ৩ বছরের জেলের বিধান রাখতে হবে এবং নির্বাচনের দিনেই ম্যাজিস্ট্রেট এ রায় দিবেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা – আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুল কারণটি ছিল গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টা, আর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্দের মুল মন্ত্র ছিল গনতন্ত্র,সমাজতন্ত্র, ধরমনিরপেক্ষতা , ও জাতীয়তাবাদ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন গনতান্ত্রিক সরকার গঠনের প্রথম ধাপ।
Email: qzkamal@gmail.com