মুর্শিদাবাদের নবাবের বলী ফেনীর শমশের গাজী

মোতাহার হোসেন
ফেনীর ছাগলনাইয়া পরশুরাম এলাকাটি একটি উপত্যকার মত। এক সময় এ এলাকাকে বলা হত চাকলালা রৌশনাবাদ। এ চাকলালা রৌশনাবাদের পুর্ব পশ্চিম ও উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা চোট বড় পাহাড় আর দক্ষিনে সাগর। মাজখানে চমৎকার সমভুমি। এর বুক চিরে বইচে মুহুরী, কহুয়া ও চিলুনিয়া নদী। বর্ষা কালে অতি বৃষ্টি হলে ত্রিপুরার পাহাড়ী ঢল নদীর দু’কুল ভেষে নিকটবর্তি নিচু জমি ও বাড়ী ঘর ভাষিয়ে গেলেও এর স্থায়ীত্ব থাকে ক্ষনস্থায়ী। বৃষ্টি থেমে গেলে পানী নেমে যায় বাকি সময় একেবারেই শান্ত। বিস্তির্ন ফষলী মাঠ নদীর কল কল ধ্বনী। পাখির কলতান।এ উপত্যকার জমিদার ছিলেন জমিদার নাছির মোহাম্মদ। আর জমিদারের তহসিলদার ছিলেন শমশের গাজী, সুদর্শন সুঠাম দেহী শমশের সহজেই জমিদার পরীবারের মন জয় করে নেন। এ সুবাদে তার অবাধ যাতায়াত ছিল জমিদার মহলে। প্রেমে পড়ে যান জমিদারের একমাত্র সুন্দরী কন্যা দৈয়া বিবির সাথে।
জমিদার কন্যার সাথে সামান্য তহসিলদারের প্রেম! অসম্ভব। রেগে অগ্নিশর্মা নাছির মোহাম্মদ। যেভাবেই হোক শমশেরের মস্তক চাই। শমশের এরুপ পরিস্থিতির জন্য আগেই প্রস্তুত ছিল। বেধেগেল যুদ্ধ। শমশেরের বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গোপনে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। সাহসী এবং ভীর শমশেরের নেত্রিত্বে লাঠিয়াল বাহিনী উল্কা বেগে আক্রমন করে বসল জমিদার বাড়ী। কার সাধ্য তাকে রোখে!। নাছির মোহাম্মদের সোচনীয় পরাজয়। কোন রকমে প্রান নিয়ে পালিয়ে গেলেন উদয়পুরে। সে থেকে ফেনীর লোক কাউকে ধমকাতে গিয়ে বলে (এক্কারে দোম্বই উধপুর নিমুগোই) একেবারে দোড়াই উদয়পুর নিয়ে যাব।
পালিয়ে যাওয়ার সময় নাছির মোহাম্মদ তার কন্যাকে সাথে নিতে চেয়ে ছিলেল কিন্তু দৈয়া বিবি আগেই শমশেরের শিবিরে চলে আসেন। কাজে মেয়েকে ফেলেই নাছির মোহাম্মদকে পালাতে হয়েছিল পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে। আশ্রয় নিয়ে ছিলেন উদয়পুরের জমিদার বাড়ীতে। শমশের দৈয়া বিবিকে পেলেন সাথে জমিদারিও। শমশেরের জমিদারী আমল ছিল ব্যতিক্রম ধর্মী। সাহসী বীর শমশের ভয় পেতেন না কাওকে বরং লোকে তাকে ভয় পেত। আশ পাশের অন্যান্য জমিদার গন, সুদ খোর মহাজন, মুনাফা খোর এবং জোরদারদের কাছে সে ছিল মুর্তমান আতংক। তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে সাধারনের মধ্যে বিলি করতেন অথবা জনসার্থে ব্যয় করতেন অকাতরে তাই জোরদারদের কাছে সে ছিল শমশের ডাকু আর স্বাধারনের কাছে গাজী। তার ভয়ে এবং আতংকে আশ পাশের জমিদারদের ঘুম হারাম হয়ে যায় শমশের কখন কার জমিদারী দখল করে নেয়। ভয়ের আরেকটি কারন হচ্ছে শমশেরের জনপ্রিয়তা।
নাছির মোহাম্মদ ও অন্যান্য কতিপয় জমিদার নবাবের দরবারে হাজির মুর্শিদাবাদে। জমিদারগন নবাবকে বুজাতে সক্ষম হন যে; শমশেরের গতি এখনি রোধ করা না গেলে সে আশেপাশের অন্যান্য জমিদারী দখল করে নিবে এবং নিজেকে স্বাধীন ঘোষনা করবে।
নবাব সৈন্য পাঠালেন, কৌশলে শমশের গাজীকে বন্ধিকরা হল এবং নির্মমভাবে হত্যা হল। তার ভুগভর্স্থ অশ্রাগার ধ্বংশ করা হল যা “শমশের গাজির এক্ষুল্যা” নামে ইতিহাসে সাক্ষি হয়ে আছে।
শমশের বেশ কিচু জনহিতকর কাজ করে গেছেন। সুপেয় পানির জন্য ফেনীর যায়গা যায়গায় বড় বড় দীঘী ক্ষনন করেছেন, চলাচলের জন্য রাস্তা, কেনা কাটার জন্য হাট বাজার।
শমশের গাজী দীঘি, কৈয়ারা দীঘি, দৈয়া বিবির রাস্তা, দৈয়া বিবির হাট তাকে অমর করে রেখেগেছ্। আজো নিশীথ রাতে হুহু হুহু করে বাতাস কাদে; গ্রামে আজ ও বিলাপ হয় “ঢাকা গিয়া শমশের গাজী কিনি খাইলো নুন, কৈয়ো কৈয়ো মায়ের কাছে গাজী হইলো খুন”।