শ্রাবণের দাবদাহ। আমন চাষাবাদ হুমকিতে।

মোতাহার হোসেন
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, করেছো দান’। আষাঢ় শ্রাবণ দুইমাস বর্ষাকাল অর্থাৎ বাদল দিন। বাদল দিনের প্রত্যূষে, মানে আষাঢ় মাসের পয়লা তারিখ সকালে গিয়েছিলাম কদম্ব তলায়; না একটা ফুলও পাইনি। গাছে একটা ফুলও ছিলনা। এ বছর ফুল ফুটে গিয়েছে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসেই। শেষ হয়ে গিয়েছে জ্যৈষ্ঠের প্রথম ভাগেই। তাই আষাঢ় মাসের পয়লা তারিখে গিয়েও কদম্ব গাছে কোন ফুল পাওয়া যায়নি। এতো কথার অবতারণা করছি এই কারণে যে, এবছর বর্ষা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। বলতে গেলে শীত কাল থেকেই। আর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসেতো অনবরত ঝরেছে শ্রাবণের বারিধারার মত।
আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণেরও প্রথম সপ্তাহ চলে যাচ্ছে। বাদল দিনের ঝরো ঝরো ঝরার চিহ্ন মাত্র নেই। ভরা বর্ষা মৌসুমে চৈত্রের দাবদাহ। মাঠঘাট শুকিয়ে চৌচির। গ্রামে গঞ্জে হাহাকার পড়ে গেছে। শহরের লোক তিব্র গরমে হা হুতাস করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শ্রাবণের এইদিনে এরূপ তাপমাত্রা শুধু অসহনীয় নয়, আস্বাভাবিকও। এসময়, আষাঢ় শ্রাবণ মাসে একনাগাড়ে বৃষ্টি লেগে থাকার কথা। এতো গেল তীব্র এবং অসহনীয় গরমের কথা। কিন্তু এর থেকেও ভয়াবহ হচ্ছে আমন বুনতে না পারার কথা।
শ্রাবণ মাসে কৃষক রোপা আমন ধান বপন করে। আষাঢ়ের বৃষ্টি থেকে কৃষকেরা বীজ বপন ও ধান ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে থাকে এবং শ্রাবণের রোপা আমন বুনে। কিন্তু এবছর পানির অভাবে কৃষকেরা রোপা আমন লাগাতে পারছেনা, পারছেনা ফসল বুনার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে।
রোপা আমন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কৃষি জমিতে লাগানো হয়। দেশের মোট চালের বেশরভাগই যোগান দেয় আমন ধান। একারণে এর গুরুত্ব অনেক। আর এই রোপা আমন যদি সময় মত লাগানো সম্ভব না হয় তাহলে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যাবেনা। খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে বাংলাদেশ। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানির উপর দেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। চালের দাম এমনিতেই অনেক বেশি, আরও বাড়বে। সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে বাংলাদেশ।
সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে; কৃষি বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, সর্বোপরি আবহাওয়া অধিদপ্তর। যাদের দায়িত্ব ছিল, তারা কি আগাম কোন সতর্ক বার্তা দিয়েছেন? কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণের জন্য, যাতে তারা (কৃষকরা) আগাম আমন রোপণ করে ফেলে।
বললেই তো আর রোপন করা যায়না। এর জন্য বীজ দরকার। রোপনের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা দরকার। তবুও আগাম সতর্ক বার্তা পেলে, কৃষকদের মটিভেট করা হলে, আমাদের পরিশ্রমী কৃষকরা খেয়ে না খেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে রোপা আমন রোপন করে আসু ভয়াবহ পরিনতি ঠিকই সামাল দিতে পারতো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের কর্তা ব্যক্তিদের কি কৃষকদের নিয়ে ভাববার সময় আছে? চালের দাম ১০০ টাকা কেজি হলেও ওনাদের কি কিছু যায় আসে। আগাম যে সতর্ক করতে হবে, কৃষকদের মটিভেট করতে হবে, সে মেধাই তো অনেকের নেই। এদের অনেকে এখনো প্রশ্ন করে ধান গাছে তক্তা হয় কিনা।
আমরা সাধারনেরা শঙ্কিত। এখনি কিছু করেন। কৃষকের পাশে দাঁড়ান, তাদের পরামর্শ দিন। তারা (কৃষকরা) কর্মঠ, তারা পরিশ্রমী। অসম্ভবকে তারা সম্ভব করে তুলবে।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক, বি আই ডাব্লিও টি এ)