সঙ্গীতে ৫০ বছর পূর্তিতে তিমির নন্দীর নতুন অ্যালবাম

অস্ত্র দিয়ে নয়, কণ্ঠ দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার ভূমিকাও তাই অসামান্য। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে গলা ছেড়ে গেয়েছেন। মুক্তিকামী যোদ্ধাদের দিয়েছেন অনুপ্রেরণা। বলছি বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী তিমির নন্দীর কথা।খ্যাতিমান এই সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গীত কেরিয়ারের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে এ বছর। ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গান করে যাচ্ছেন। বর্ণাঢ্য এই সঙ্গীত জীবনের সুবর্ণ জয়ন্তীতে নতুন একটি অ্যালবাম নিয়ে আসছেন তিমির নন্দী। যার নাম দিয়েছেন ‘মেঘলা দু’চোখ’। দেশের অন্যতম অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ব্যানারে আগামী ১১ অক্টোবর প্রকাশ হচ্ছে অ্যালবামটি।
তিমির নন্দী বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পর অ্যালবাম প্রকাশ করছি। এর আগে ২০০৯ সালে আমার সঙ্গীত জীবনের ৪০ বছর পূর্তিতে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলাম। এবারের অ্যালবামে মোট ১৪টি গান থাকছে। সবগুলো গানই মৌলিক আধুনিক গান।
‘মেঘলা দু’চোখ’ অ্যালবামে থাকা গানগুলোর শিরোনাম- ‘দুটি পাখী মিলে বাঁধে’, ‘ভালোবেসে সবাই যদি’, ‘আমার মেঘলা দু’চোখ’, ‘সিঁদুরে মানায় ভালো’, ‘যখন ডেকেছি কাছে’, ‘জীবনের বাঁকে যদি’, ‘ঐ দু’টি চোখ’, ‘শুধু মন ছুঁয়ে যায়’, ‘ও নদী তোরই বুকে চলেছি’, ‘কতবার মনকে বলেছি’, ‘তুমি ছিলে এই জীবনে’, ‘কেঁদো না সেদিন তুমি’, ‘এই হৃদয় ছুঁয়ে’ ও ‘তুমি চলে গেছো’।
গানগুলো লিখেছেন আয়েত হোসেন উজ্জ্বল, খোকন সিরাজুল ইসলাম, মোঃ রফিকুল হাসান, জাহিদ খান, হারুন মোঃ আফজাল, সৈকত বিশ্বাস, এস এম আব্দুর রহিম, ইমতিয়াজ ইকরাম, হামিদুল্লাহ দুলাল ও আলী আসকার নুটু। একটি ছাড়া বাকি ১৩টি গানের সুর করেছেন তিমির নন্দী নিজেই। সেই ১টি গানের রয়েছে আবার অন্যরকম অতীত।
তিমিত নন্দী বলেন, ‘কেঁদো না সেদিন তুমি’ গানটি ১৯৯০ সালের। বদরুল আলম বকুল গানটির সুর করেছিলেন। তখন সিস্টেম ছিল, গান রেকর্ডের পর শুটিং হতো। তো রেকর্ডিংয়ের পর হঠাৎ করেই আমার মা মারা যান। তখন আমি চলে যাই কুষ্টিয়ায়। সেখান থেকে ফেরার পর তো আমার মাথা চুল ছাড়া। প্রযোজক বললেন গানটি গাইতে। আমি বললাম, এই অবস্থায় কীভাবে গাইব? তখন বলা হয়, একটি হ্যাট পরে গাইতে। যাইহোক, হ্যাট পরেই গানটি গেয়েছিলাম। তো বদরুল আলম বকুল মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে আমরা গানটা নিয়ে আবার বসি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে, গানটি নতুনভাবে করবো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মারা গেল। যেহেতু আমার মায়ের একটা স্মৃতি, আবার বদরুল আলম বকুলের সঙ্গে কথা ছিল যে, গানটা করব। তাই গানটি এই অ্যালবামে রেখেছি।
এই অ্যালবামের সবগুলো গানের রেকর্ডিং হয়েছে কলকাতার ধ্বনি স্টুডিওতে। গানগুলোর সঙ্গীতায়োজন করেছেন বুদ্ধদেব গাঙ্গুলি। যিনি সলিল চৌধুরীর সহকারী ছিলেন। তিমির নন্দী বলেন, রেকর্ডিংয়ের সময় বুদ্ধদেব গাঙ্গুলীসহ আরও যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই গানগুলোর প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছিলেন, ‘বহু বছর পর ভালো কিছু বাংলা গানের সঙ্গে বাজালাম’। আমি কেমন গেয়েছি সেটা মুখ্য বিষয় নয়। গানগুলোর কথা এবং যেই মেজাজ, সেটাতে তারা মুগ্ধ হয়েছেন।
এদিকে ‘মেঘলা দু’চোখ’ অ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আগামী ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রকাশনা। এতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক সেনা প্রধান লে. যে. হারুনুর রশীদ বীর প্রতীক, নাট্যজন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কণ্ঠশিল্পী সাদিয়া আফরীন মল্লিক ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবায়দুল করিম এমপি। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখবেন আমরা সূর্যমুখী’র নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম সেলিম।
MeghlaDuChokh_TimirNandi