সময় বাঁচাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে বাইক শেয়ারিং

বাংলাদেশে রাইডশেয়ারিং সার্ভিস শুরু হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে এসেছে। সিএনজি-অটোরিকশার নৈরাজ্য কমে এখন তারাও মিটারে চলার পথ বেছে নিচ্ছে। তবে একটি কারণে বাইক শেয়ারিং দিন দিন আরও বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। সেটা হলো সময় বাঁচানো। যানজটের শহর ঢাকাতেও এখন সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে আর যে সময়টুকু বেঁচে যাচ্ছে সে সময়ে অন্যান্য কাজেও মনোনীবেশ করা সম্ভব হচ্ছে। এই কারণে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে বাইক শেয়ারিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।সময় বাঁচাতে বাইক শেয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধওে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার ইসলাম শুভ বলেন, ‘আমি বনানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছি। বাসা গুলশান-১ এ হওয়ার সুবাদে প্রায় প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আমার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল রিকশা। কখনো কখনো বাসেও যাতায়াত করতাম তবে যানজট এড়িয়ে চলার জন্য রিকশাই বেশি ব্যবহার করতাম। সকাল ১০টার ক্লাস ধরার জন্য রিকশাওয়ালাদের কাছে রীতিমত আবেদন পত্র দেয়া লাগতো বললেও ভুল হবে না। ‘মামা, জরুরি ক্লাস আছে! একটু নিয়ে যান না প্লিজ!’, ‘মামা ১০ টাকা বেশি নিয়েন তবুও চলেন!’ আরও কতো না আকুতি-মিনতি। আর যদি দৃষ্টি সীমানায় জ্যাম ধরা পরে তাহলে তো রক্ষাই নেই। হাতে-পায়ে ধরলেও তারা বসে থাকবেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার একমাত্র উত্তরসূরির মতো নতুবা এক দফা এক দাবী, “রাস্তায় মেলা জ্যাম! অহন ১০০ টাহা লাইগবো! এর কমে যাওন যাইব না”।
আর সিএনজি বা ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া মেটানো একজন ছাত্রের জন্য কতোটা কষ্টকর সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি আরও বলেন, ‘বাইক শেয়ারিংয়ের বিষয়ে শুনেছিলাম একটু দেরিতেই। নাদিম নামে আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু প্রায় আমাকে বাইক শেয়ারিং সার্ভিস ব্যবহার করার পরামর্শ দিত। কিন্তু আমার মাথায় শুধু ঘুরতো, এখান থেকে এটুকু যাওয়ার জন্য আবার বাইক শেয়ারিং করবো! বাইক শেয়ারিং ব্যবহার করার জন্য একদিন সে আমার মোবাইলে উবার অ্যাপটি ইনস্টল করে উবার মটো সম্পর্কে কিছুটা বুঝিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কখনো ব্যবহার করা হয় নি। গত ১২ জুন ছিল আমার সেমিস্টার ফাইনালের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন। ম্যাডাম ভীষণ রাগী, দুপুর ১২টার মধ্যে জমা না দিতে পারলে আর নিবেন না। এর পর থেকেই আবার ঈদের ছুটি শুরু।
কথায় আছেনা, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত্রি হয়। ওই দিনই সব রিকশাওয়ালা মামা আরামে বসে আছেন, টাকা বাড়িয়ে দিব বলেও লাভ হলো না। অগত্যা বন্ধুর পরামর্শ মতো বাইক শেয়ারিংয়ে রিকোয়েস্ট দিলাম।
ভাবছিলাম এটুকু যাওয়ার জন্য কেউ কি আসবে? কিন্তু আমার সন্দেহ দূর করে রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যেই একটি ফোন এলো। তিনি বললেন তার আসতে ৫ মিনিট লাগবে এবং ঠিক ৩ মিনিটের মধ্যেই একটি নেভি ব্লু রঙের ‘পালসার ১২৫ সিসি’ মোটরসাইকেল নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল আমাদেরই বয়সী একটি ছেলে। নাম ছিল রাফসান। বললাম, ভাই, দেরি হয়ে গেছে। একটা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে ১২ টার মধ্যেই। বিশ্বাস করবেন না! মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে সে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছে দিল।
ভাড়া আসলো মাত্র ৮০ টাকা। না রিকশার পেছনে ছুটতে হলো, না বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হলো, না ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হলো, না বেশি টাকা খরচ হলো তবুও সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম।’
শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, ‘রাইড আসার মাঝে যে ৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল সে সময়ে অ্যাপটি খুটে খুটে দেখছিলাম। আশেপাশে কয়টা মোটরবাইক আছে, কোনটা সবচেয়ে কাছে, বাইকারের উপর ভরসা রাখতে পারবেন কি না, রেটিং ব্যবস্থা, শেয়ার স্ট্যাটাস ফিচার, জাতীয় হেল্পলাইন সুবিধা ৯৯৯ ও আরও নানা রকম সুবিধা অ্যাপটিতে দেওয়া আছে যার ফলে যাত্রাপথ হবে নিরাপদ ও আরামদায়ক।’
শুধু শাহরিয়ার ইসলামই নয়, ঢাকায় অনেক শিক্ষার্থীই এখন সময় বাঁচাতে বা সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করছেন। – benchmarkpr