সিজারিয়ানের অপপ্রয়োগ এবং ডাক্তারদের খামখেয়ালীপনা

মোতাহার হোসেন
সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে প্রসব চিকিৎসা শাস্ত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশে এর ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কারণে সিজারিয়ান করছে, অকারণেও করছে। সকল ক্ষেত্রে পরিনাম শুভ হচ্ছেনা। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ। শিশু এবং প্রসূতি দুজনের জীবন পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। একারণে এ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে অকারণে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এ পদ্ধতির প্রয়োগ। দ্বিতীয়ত অপারেশনের সময় কোন কোন ডাক্তারের চরম খামখেয়ালী, পেটে কেচি, ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করে দেয়া, পরিণতিতে প্রসূতির অকাল মৃত্যু ইত্যাদি।দেশের উচ্চবিত্য ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে সিজারিয়ানে প্রসব হচ্ছে ৯৭%। তারমধ্যে মারা যাচ্ছে ২৭% । সিজারিয়ান পদ্ধতি গ্রহনের প্রবণতা দরিদ্র পরিবারের মধ্যেও লক্ষণীয়। যেখানে WHO (World Health Organization) এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র ১৫% প্রসূতির সিজারিয়ান পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজন হওয়ার কথা (তথ্যসূত্র একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল)
আমরা এখন দেখব এই সিজারিয়ান পদ্ধতি আসলো কোথা থেকে। রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজারের দৈহিক অবয়ব মাতৃ গর্ভেই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়; যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় দিগুন। এমতাবস্তায় নরমাল প্রসব একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। মা ও সন্তানের জীবন ভয়াবহ ঝুঁকিতে; তখন তৎকালীন রোমের বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসকগন পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন, মায়ের পেট কেটেই বাচ্চা বের করা ছাড়া বিকল্প নেই। মারাত্মক কথা!! এর আগে কেউ এরূপ কথা শোনেনি। চিকিৎসকরা বললেন, ঝুঁকি নিতেই হবে, নচেৎ মা এবং শিশু দুজনকেই হারাতে হবে। অবশেষে পেট কাটার অনুমতি মিললো।
সফল অপারেশনের মাধ্যমে মায়ের পেট কেটে বাচ্চা বের করা হলো; ঝুঁকি মুক্ত হলো। রোমের চিকিৎসকরা রচনা করলেন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এক নতুন ইতিহাস। জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে এই পদ্ধতির নাম দেয়া হলো সিজারিয়ান সেকশন। যদিও অনেকেই সাধারণ কেচির সাথে এর নামকরণ গুলিয়ে ফেলেন। কোন কোন ডাক্তারকেও আমি এই ভুল করতে দেখেছি।
ডাক্তারি একটি মহান পেশা। এই পেশায় মিশনারি ঝিল আছে। পেশাজীবীদের মধ্যে একমাত্র ডাক্তারদেরকেই পেশার বানজ্যিকরনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। যেমন এটা খাবেন না, ওটা খাবেন না, শাকসবজি বেশি বেশি খাবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কথা/ পরামর্শ নিশ্চয়ই তাদের পেশা বানিজ্যিকরনের পক্ষে যায়না। তবু তাদের বলতে হয়।
ডাক্তার হতে হলে ভাল ছাত্র হতে হয়। তা না হলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগই পায় না। শুধু ভাল ছাত্র কিংবা ভাল ডাক্তার হলেই হয়না। ভাল মানুষও হতে হবে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।
ভারতে একসময় ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় কে ‘ভগবান’ বলা হতো, ডঃ দেবি শেঠিকে এখন ‘দেবতা’ বলা হয়, আরো আছে। বাংলাদেশেও আছে। ডঃ মোহাম্মদ ইব্রাহীম , অধ্যাপক এম আর খান সহ আরও কয়েকজন। ওনারা প্রাতঃস্মরণীয়। এ সম্মান তারা অর্জন করেছিলেন শুধু ডাক্তারি দিয়ে নয়; সেবা দিয়ে, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ দিয়ে, অকৃত্তিম ভালবাসা দিয়ে। পেশায় নিষ্ঠা ও সংবেদনশীলতা দিয়ে।
তাই বলছিলাম, ডাক্তারদের কাছে প্রত্যাশার কথা। শুধু বেশির ভাগ ডাক্তার নয়, সকল ডাক্তারের কাছে প্রত্যাশা আরও আন্তরিক হোন, আরও মানবিক হোন। পেশার প্রতি আরও নিষ্ঠাবান হোন। মানুষকে ভালবাসুন।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সাবেক পরিচালক, বি আই ডাব্লিও টি এ।)