সুপারম্যানের আকাশে ওড়া এবং দুর্নীতির পাগলাঘোড়া

মোতাহারহোসেন
গত শতাব্দীর শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুপারম্যান চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই অসম্ভব ব্যবসা সফল এ ছবি নিয়ে সারা দুনিয়ায় হইচই পড়ে যায়। কারন, ছবিটি তে অত্যাধুনিক ক্যামেরার অসাধারন সব কারুকলা দেখানো হয়েছে। গল্পের নায়ক আকাশ দিয়ে উড়ে যায় স্বাচ্ছন্দে। এ বোমা ফাটানো ছবি দেখে বিশ্ববাসী হতবাক; ক্যামেরার এরকম জাদুকরী কারুকাজ কেউ দেখেনি অতীতে।
ছবির পরিচালক রিচার্ড ডোনার এরপর ঘোষণা দেন তিনি এবার আর একটি ছবি বানাবেন লাভ স্টোরি নিয়ে। একেবারেই সাধারণ একটি প্রেমের গল্প নিয়ে।সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন; আপনি সুপারম্যানের মত এক্সট্রাওর্ডিনারি ছবি বানিয়েছেন, এবার সাধারন প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন কেন? রিচার্ডের জবাব ছিল; আমি আমার দর্শকদের বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম, গল্পের নায়ক আকাশে উড়ে, এবার আমি আমার দর্শকদের বিশ্বাস করাবো,একটি ছেলে আর একটি মেয়ে পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসে।বস্তুত এ বিশ্বাস করাতে পারাটাই হচ্ছে ছবির সফলতা আর বিশ্বাস করাতে না পারলেই ছবি ফ্লপ।
এ বিশ্বাস আনতে পারা না পারার মধ্যে অনেক সফলতা ব্যার্থতা নির্ভর করে। ইদানিং পত্র পত্রিকা খুললেই দেখবেন, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবেনা। অন্যদিকে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির মহাসমুদ্রে আমি কাকে ধরবো। আমজনতা কারো উপর আস্থা রাখতে পারছেনা। কারন, দুর্নীতি এখনো আছে আগেও ছিল তার আগেও ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুংকার শুনেছেন রাষ্ট্রের প্রতিষ্টা লগ্ন থেকে। কাজেই এসব কথায় আর সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে আমজনতা বিশ্বাস ও হারাচ্ছে দিনে দিনে।
এখন অনেক অনেক দুর্নীতি অনিয়ম অব্যবস্থাপনা থেকে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম অসহনীয় হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগে বি,আর, টি, এ এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভাড়ায় চালিত সিএনজি ট্যাক্সির লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়।কিন্তু প্রাইভেট দেয়া যাবে বলে অধ্যাদেশের ভিতরেই দুর্নীতির ফাঁক ডুকিয়ে দেয়া হয়। ব্যাস হয়ে গেল শুরু হয়ে গেল মহা ধুমধামে বি,আর,টি,এ এবং ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ বানিজ্য। দুর্নীতি একজায়গায় থেমে থাকলনা,ক্রমশ বাড়তেই থাকলো। এক পর্যায়ে হাইকোর্টকে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দিতে হল। তাতেও দুর্নীতি থামেনি। কোর্টের অব্জার্ভেশন দেখিয়ে ঘুষের টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ তিনগুণ হয়ে গেল। জনগণের পকেট খালি থাকলো আর পকেটভারী হতে থাকলো বি,আর,টি,এ এবং ট্রাফিক পুলিশের।
এমতাবস্থায়, মন্ত্রী যখন বলেন, জিরো টলারেন্স; দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। তখন ঘুষখোররা রিক্স বেশি বলে ঘুষের টাকা আরো বাড়িয়ে নিচ্ছেন না তো? মন্ত্রীর হুমকির পর যেখানে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিলে কাজ হত সেখানে ত্রিশ হাজার দিতে হচ্ছেনাতো? দুদক চেয়ারম্যান কি এ কারনেই বললেন দুর্নীতির এ মহাসমুদ্রে আমি কাকে ধরবো?
এসব বিষয়ে কি আমাদের দেশের পলিসিমেকাররা নজর দিবেন? আমরা কি বিশ্বাস করব, দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া সত্যিই এবার থামবে?