হেস্টিংসের নারী নির্যাতন ও এডমন্ড বার্কের বর্ণণা

মোতাহার হোসেন
স্যার এডমন্ড বার্ক যখন বৃটিশ পার্লামেন্টে বক্তৃতা করতেন তখন পার্লামেন্ট কক্ষে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করতো। সরকারি দল এবং বিরোধী দল উভয় পক্ষ নিরবতা অবলম্বন করে বার্কের বক্তৃতা শুনতেন। বক্তৃতা শেষ হয়ে গেলেও আরও কিছুক্ষন নিরব থাকতেন। এ আফসোস নিয়ে কেন এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। আরও কিছুক্ষন বক্তৃতা চললেই তো ভালো ছিল।রাজনৈতিক সাংবাদিক ও দার্শনিক মিঃ বার্ক আয়ারল্যান্ডে জন্ম নিয়েছিলেন ১৭২৯ সালের ১২ই জানুয়ারি। বৃটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলেন বহুবার; বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা থেকে। যে এলাকায় তিনি দাঁড়াতেন, সে এলাকা থেকেই তিনি নির্বাচিত হতেন। এলাকাবাসী বার্ককে নির্বাচিত করে নিজেদের সম্মানিত বোধ করতেন। বার্ক তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন এটা যে গৌরভের!
মির্জাফর-জগতশেঠদের ষড়যন্ত্রে ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজের পতন হয়। পরবর্তিতে মির্জাফরের বশধরেরা নাম মাত্র নবাব থাকলেও শাসন ক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে। আর তখন বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। বাংলায় ওয়ারেন হেস্টিংসের নারী নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে খোদ বৃটিশ পার্লামেন্টে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংসদীয় কমিটি হয় ঘটনা তদন্ত করে দেখার। কমটির প্রধান নিযুক্ত হন স্যার এডমন্ড বার্ক।
ওয়ারেন হেস্টিংসের নারী নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তদন্ত কমিশনের প্রধান হিসেবে মিঃ বার্ক যখন রিপোর্ট দিচ্ছিলেন, তাঁর রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে পার্লামেন্ট কক্ষের দর্শক গ্যালারীতে একাধিক ইংরেজ রমণী আতঙ্কে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছিলেন। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে যে, হেস্টিংসের নারী নির্যাতন যেমন সত্য, তারথেকেও বড় সত্য হচ্ছে বার্কের বর্ণণা। আসলে বার্কের বর্ণণার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি যখন বলতেন; অডিয়েন্সদের মোহগ্রস্ত করে ফেলতেন সবাক চলচ্চিত্র দেখার মত। অডিয়েন্সদের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর।
বর্তমান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা অনেক বীভৎস নির্যাতনের দৃশ্য দেখতে পাই। ছেলে মাকে নির্যাতন করছে, পুত্রবধু শাশুড়িকে নির্যাতন করছে, স্বামী- স্ত্রীকে নির্যাতন করছে, এমনকি পিতাও কন্যাকে নির্যাতন করছে। ঘরে নারী নির্যাতিত, বাইরে নারী নির্যাতিত। এসব ঘটনা নিখুঁতভাবে বর্ননা করার জন্য আজ আর কেও নেই। নেই অস্বাধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এডমন্ড বার্ক। ১৭৫৭ সালের ৯ই জুলাই UK তে মৃত্যুনরণ করেন এই ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ।
মিঃ বার্কের জীবনের প্রথম দিক কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা; শুধুমাত্র একাগ্রতা ও নিষ্ঠায় নিজেকে এতবড় সেলিব্রেটি করে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মিঃ বার্ক। প্রথম দিকে তিনি বক্তৃতা করতেই পারতেন না। একবার এক সভায় বক্তৃতা দিতে উঠে, “আই কন্সিভ, আই কন্সিভ,আই কন্সিভ’ তিনবার বলে তিনি আর বলতে পারেননি। হাঁটু কাঁপছিল, বুক ধড়পড় করছিলো। তখন একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, মিঃ বার্ক তিনবার গর্ভবতি হলেন। এ অপমান বার্ক সহ্য করতে পারেননি। বড় একটা আয়না বাসায় টাঙ্গিয়ে প্র্যাক্টিস শুরু করে দেন। শুধুমাত্র একাগ্রতা, কঠোর পরিশ্রম ও অসীম মনোবলের কারণে মিঃ বার্ক বিশ্ব নন্দিত হয়েছেন। বিশ্ব তাঁকে স্বরন করে বিনম্র শ্রদ্ধায়।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক, বি আই ডাব্লিও টি এ।)