আমরা যদি মূর্ছা যেতে পারতাম

মোতাহার হোসেন‌
ব্রিটিশ আমলে বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। ১৭৭৪ সালে বাংলার গভর্নর হওয়ার পর থেকেই নারী নির্যাতন শুরু করেন। ওয়ারেন হেস্টিংসের নারী নির্যাতনের রোমহর্ষক ঘটনা সর্বজনবিদিত। খোদ লন্ডন পার্লামেন্ট তার নারী নির্যাতনের কাহিনী শুনে আৎকে উঠেছিল। একাধিক সংসদীয় কমিটি এ নিয়ে তদন্ত করে। প্রতিবেদন দেন সংসদে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল খোদ ইউরোপে। তেমনি একটি কমিটির প্রধান ছিলেন বিখ্যাত পার্লামেন্টেরিয়ান, স্যার অ্যাডমন্ড বার্ক। তিনিও হাউজ অব কমন্সে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদন দেওয়ার সময়, এ বিখ্যাত বাগ্মী এবং পার্লামেন্টারিয়ান, ওয়ারেন হেস্টিংসের নারী নির্যাতনের রোমহর্ষক ঘটনা তুলে ধরেছিলেন। তা শুনে, তখন হাউজ অব কমন্সের দর্শক গ্যালারিতে বসা একাধিক রমণী মূর্ছা গিয়েছিলেন! অনেকে বিশ্বাস করবেন না হয়তো, বাট দিস ইজ ফ্যাক্ট। পার্লামেন্টের প্রসিডিং দেখলেই এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। আতংকিত হয়েছিল সারাবিশ্ব। বিশ্ববাসী হতবাক! নিন্দার ঝড় উঠেছিল হেস্টিংসের বিরুদ্ধে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মূর্ছা যাওয়া নিয়ে। এখন নারী নির্যাতিত হচ্ছে ট্রেনে, বাসে, লরীতে, লঞ্চে। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে, অলিতে-গলিতে। খোদ ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও। ঘরে নারী নির্যাতিত হচ্ছে। বাইরে নারী নির্যাতিত হচ্ছে। ধর্ষিত হচ্ছে। গ্যাং র‍্যাপ হচ্ছে। পিতা কর্তৃক কণ্যা ধর্ষিত হচ্ছে! গণধর্ষণ করে মেরে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে কিংবা খালে বিলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সৎ পিতা নয়, আপন পিতাও মেয়েকে ধর্ষণ করছে। আমরা মূর্ছা যাচ্ছি না। মূর্ছা যাওয়া আমরা ভুলে গেছি। আমার ভয়টা এখানেই।
আমরা যে মূর্ছা যাওয়া ভুলে গেছি, এটা শুভ লক্ষণ নয়। আস্তে আস্তে এসব আমাদের গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। সংবাদ পত্র এখন আর ফলোআপ নিউজ করছে না। গুরুত্ব দিয়ে নিউজই করছে না। কলম ভোতা হয়ে যাচ্ছে আমাদের। এরূপ চলতে থাকলে, মহা সর্বনাশ হয়ে যাবে। ধর্ষণের চেয়েও ভয় পাচ্ছি, ধর্ষণ গা সওয়া হয়ে যাওয়াকে। নানা প্রতিকূলতার চাপে, ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপরাধেরও বিচার হচ্ছে না।
আমরা যদি মূর্ছা যেতে পারতাম। প্রতিবাদের ঝড় অব্যহত থাকত। তাহলে আশা ছিল। হয়তো এর প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব হত।
নারী সংগঠন সমূহ নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য পত্র পত্রিকায় ছবি ছাপানোর মহড়ায় ব্যস্ত। বাস্তবমূখী সুফল বয়ে আনতে পারে এরূপ কর্মসূচী গ্রহণে তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। শুধু সংগঠন আর সংগঠন। পত্রিকায় বিবৃতি। ফটো সেশান। তাই বলছিলাম, আসুন আমরা আবার মূর্ছা যাওয়া শুরু করি। হয়তো এই মূর্ছা থেকেই সংগঠিত প্রতিবাদ আবিষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর পথে সহায়ক হবে। মূর্ছা যাওয়া ভুলে গেলে আমরা অন্ধকারে অতলান্তিকে পৌঁছে যাব। কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।
মোতাহার হোসেন‌, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ