ছাগলনাইয়ার নাম নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা!

মোতাহার হোসেন
ছাগলনাইয়া নামের সাথে মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরির কোন সম্পর্ক নেই।একেবারেই ভুল ধারনা।
‘৪৭পুর্ব দাংগায় গান্ধীজি শান্তি মিশন নিয়ে নোয়াখালী সফর করেন ঠিকই তবে মহাত্মাজি ছাগলনাইয়া যাননি ।তিনি নোয়াখালী সদরের নোয়াখালী, রামগতি,বেগমগঞ্জ এবং এর আসপাসের এলাকা সফর করেন।বেগমগঞ্জে এখনো গান্ধী আশ্রম বিদ্যমান। এইতো সেদিন, ২রা অক্টোবর, বেগমগঞ্জ গান্ধী আশ্রমে গান্ধীর জন্ম উৎসব পালন করা হলো।মিডিয়াতে আপনারা অনেকেই দেখে থাকবেন।
ছাগলনাইয়া বৃহত্তর নোয়াখালীর অংশ হলেও এর অবস্থান ততকালীন ফেনী মহকুমায়।মহাত্মা গান্ধী ফেনী মহকুমায় আসেন নি, ছাগলনাইয়াতো আসেনইনি।
গান্ধী ছাগলের দুধ খেতেন তাই তার সাথে ছাগল থাকতো। নোয়াখালী সফরের সময় তার ছাগল হারিয়ে যায়; চুরি হয়ে যায়। ছাগলনাইয়ার সাথে নামের মিল থাকায় অনেকে ধারণা করেন ছাগলনাইয়া থেকে গান্ধীর ছাগল চুরি হয়েছে এবং এ কারনে নাম হয়েছে ছাগলনাইয়া। ধারনাটা ভুল এবং ভিত্তিহীন।
প্রথমত,গান্ধী ছাগলনাইয়া আসেনইনি কাজেই ছাগলনাইয়া থেকে ছাগল চুরির প্রশ্নই উঠেনা।
দ্বিতীয়ত,গান্ধীর নোয়াখালী সফরের অনেক আগে থেকে এ জায়গার নাম ছাগলনাইয়া। ব্রিটিশ আমলের দলিলদস্তাবেজ দেখলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
ছাগলনাইয়া নামকরণ হয় শমশের গাজীর আমলে। জমিদার নাসির মোহাম্মদ এর সাথে শমশেরের যুদ্ধের সময়। নাসির মোহাম্মদ লড়াইয়ের প্রস্তুতি কল্পে এ এলাকার এক খামারে বেশকিছু ছাগল জড়ো করে রেখেছিলেন, লাঠিয়ালদের রসদ হিসাবে। রাতের অন্দ্বকারে শমশের গাজীর লোকজন ছাগল গুলো হাওয়া করে ফেলে।সকাল বেলা জমিদারের লোক গিয়ে দেখে একটা ছাগলও নাই। ব্যস হয়ে গেল!
সমস্ত এলাকায় চাউর হয়ে গেল; ছাগল নাই, ছাগল নাই। উল্লেখ্য এ এলাকায় খাশীকেও ছাগল বলে।
নাসির মোহাম্মদ – শমশের গাজীর যুদ্ধে নাসির মোহাম্মদ হেরে পালিয়ে যান উদয়পুর। এ দিকে শমশের গাজীর লোকজন উল্লাস করতে থাকে, জয়ধ্বনি দিতে থাকে। শমশের গাজী ছিল জনপ্রিয়, জমিদারের ছাগল চুরি যাওয়ায় জনগণ, ‘ছাগল নাইকা, ছাগল নাইক্কা’ বলে, ছাগল নাই, ছাগল নাই বলে উল্লাস করতে থাকে। হাটে, মাঠে,বাঠে একই আলোচনা, ছাগল নাইকা।
আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মুখে একই কথা। এর থেকে ছাগলনাইয়া নাম।
(মোতাহার হোসেন, ফ্রিলান্স সাংবাদিক এবং সাবেক পরিচালক, বিআইডব্লুটিএ।)