মোতাহারহোসেন
১৭৫৭ সালে পলাসীর আম্রকাননে একটি পাতানো যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। কিশোর নবাব সিরাজের আপন বড় খালা ঘষেটি বেগমের ষড়যন্ত্র আর মীরজাফর, জগত সেটদের বিশ্বাসঘাতকতায় এ পরাজয়ের কালিমালিপ্ত ইতিহাস সকলেই জানে। আমরা অনেকে এও জানি যে এ পরাজয়ের বীজ বপন করা হয়েছিল এর থেকেও শতবর্ষ পূর্বে, ১৬শ শতাব্দীতে, মোগল সম্রাট শাহজাহান এর আমলে।
মোগল সম্রাট শাহজাহান ভালবাসতেন তার অন্যতমা স্ত্রী মমতাজ মহল কে। মমতাজ ছিলেন এক সময়ের দোদার্ন্ত প্রতাপশালী মোগল সম্রাজ্ঞী নুরজাহান এর আপন ভাস্তি। পুরো নাম ছিল আঞ্জুমান বানু। শাহজাহান আদর করে নাম রেখেছিলেন মমতাজ মহল, মানে মহলের অলংকার।
শাহজাহান খুব ভালবাসতেন তার এই স্ত্রীকে। ১৪দশ সন্তানের জন্ম দেয়ার সময় মমতাজ ইন্তেকাল করলে তারই স্মৃতি রক্ষাত্বে শাহজাহান তৈরী করেন জগৎবিখ্যাত নান্দনিক স্থাপত্য তাজমহল।
এরপরই আসে তার কন্যাদের কথা। শাহজাহান তার কন্যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন জাহানারাকে। জাহানারা ছিলেন নির্ভিক, তেজশ্বিনী ; অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী এ শাহজাদি ছিলেন খ্যাতনামা কবি এবং চিরকুমারী। প্রথম জীবনে বাদশা বেগমের মর্যাদা ভোগ করেছেন। হেরেমে আধিপত্য করেছেন। শেষ জীবন কেটেছে আওরংজেবের জেলখানায়। অসুস্থ বন্দী পিতার সেবা করেছেন, পিতার মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত।
তো, এই জাহানারা যখন হেরেমে আধিপত্য করতেন তখন একদিন তার এক প্রিয়ভাজন বাদীর গায়ে আগুন লেগে যায় ; সে আগুন নেভাতে গিয়ে জাহানারা নিজেই দগ্ধ হন মারাত্নক ভাবে। কোন ডাক্তার কবরেজ তাকে ভাল করতে পারেনা। শাহজাদির জীবন সংশয় দেখা দিল। বিচলিত শাহজাহান, প্রাণাধিকা প্রিয় কন্যা মৃত্যুর সাথে লড়ছে।
ডেকে পাঠানো হলো ইংরেজ ডাক্তার গ্যাব্রিয়েল ব্রাউটন কে। ব্রাউটন ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুললো জাহানারাকে। জাহানারার অনুরোধে শাহজাহান ব্রাউটনকে দিতে চাইলেন পুরস্কার। চতুর ব্রাউটন বললে, নিজের জন্য কিছুই চাহিনা, কলকাতার অদূরে বালাশোরে একখন্ড জমি চাই ইংরেজ কুঠি স্থাপনের জন্য ; চাই শুল্কমুক্ত বানিজ্যের অধিকার।
কন্যা স্নেহে শাহজাহান রাজি হয়ে গেলেন, বিদেশি বেনিয়াগুষ্টি কে দিয়ে দিলেন জমি আর বাধ বিনাশুল্কে বানিজ্যের অধিকার। কন্যাস্নেহের কাছে কুটনীতি হেরে গেল। কন্যাস্নেহে অন্ধ শাহজাহান নিজহাতে বপন করলেন পরাধীনতার বিজ, নিজের অজান্তেই। এর প্রায় শতবর্ষ পরে এই বেনিয়া গুষ্টির কাছে দানত হল প্রথমে বাংলা তারপর এক এক করে পুরো ভারতবর্ষ। তারপর? তারপর তো সবই ইতিহাস।
নারী জাতিকে ছোট করা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। লেখক ভাল করেই জানে ; নারীর জাতির মধ্যেই জন্ম নিয়েছেন, মাদার তেরেসা, সিস্টার নিবেদিতা। প্রীতিলতা ঝাশীর রানী লক্ষীবাই আরো অনেকে ; তাইতো নজরুল বলেছেন; বিশ্বে যাহা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।।