পাকিস্তান নির্বাচন: ১১৩ আসনে এগিয়ে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল

পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনে বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ফলাফল আসছে।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ- পিটিআই।
তার সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমে উল্লাস করছেন।
তবে ইমরান খানের দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে তাঁকে জোট গঠনের পথে হাঁটতে হবে।
নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ কেন্দ্র থেকে ফল প্রকাশ হয়েছে।

দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মোট ২৭২টি আসনের মধ্যে ১১৩টি আসনের আংশিক ফলাফলে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ইমরানের পিটিআই।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ- পিএমএলএন পেয়েছেন ৬৪ শতাংশ ভোট, বিলওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি- পিপিপির ঝুলিতে পড়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বেসামরিক দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। এর কারণে এবারের নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিশ্ব গণমাধ্যম।
এবার ১০ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা সেইসঙ্গে বড় ধরণের ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।ভোটের ফলাফল খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ করায় তারা এমন অভিযোগ তোলেন।
নির্বাচনে ভোট গ্রহণ এবং ভোট গণনা নিয়ে শুরু থেকেই এমন নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনের আগে থেকেই নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ- পিএমএল-এন অভিযোগ করেছে যে পিটিআইকে বিজয়ী করতে আদালতের সহায়তা নিয়ে সেনাবাহিনী কয়েকটি স্থানে তাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান চালিয়েছে।
এদিকে স্বাধীন গণমাধ্যম বলছে, পিটিআই এর বাইরে অন্য দলগুলোকে দমন করার প্রচেষ্টাও চালিয়েছে সেনাবাহিনী। যদিও সেনারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে মানবাধিকার কমিশনও নির্বাচনের বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, ভোট গণনার সময় তাদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এমনকি নির্বাচনী শৃঙ্খলা ভেঙ্গে ফলাফলের সার্টিফাইড কপি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে।
বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা বিশেষ করে পিএমএল-এন এর শক্তিশালী কেন্দ্র পাঞ্জাব প্রদেশে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণায় অস্বাভাবিক বিলম্ব হওয়ায় ফলাফলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে, প্রযুক্তিগত সমস্যা সেইসঙ্গে এতো ভোট হাতে গণনার কারণে তাদের দেরি হচ্ছে।
এছাড়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরান খানকে জেতানোর চেষ্টা করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও অস্বীকার করেছে দলের নেতৃবৃন্দ।
পাকিস্তানের এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক রক্তপাত দেখতে হয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষকে।
এমনকি ভোটের দিনও একটি ভোটকেন্দ্রে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হন।
তবে স্থানীয় সাংবাদিক মনির আহমেদ জানান, “হামলার পর পর জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল ঠিকই, তবে খানিকক্ষন পরেই ভোটাররা আবারও ভোট দিতে এসেছেন। সবাই ভেবেছিল ভোট দেয়া হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এমন কিছুই হয়নি। ভোটারদের মধ্যে এরপরও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে বেশ উতসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়।” – বিবিসি