৮ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগনের শাসন; অর্থাৎ জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগে করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি। সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ক্ষমতা ও দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মালিক জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকাকে নিষ্ক্রীয করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নীলনকশা অনুযায়ী ভোটের পূর্ব রাতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে, সরকারি সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙ্গল মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখতে সাহায্য করেছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ফলে জনগণ নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার তথা- সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইউএন কনভেনশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর মতে, শুধু সাংবিধানিক অধিকার নয়; বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের মানবাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব বে-আইনী কর্মকান্ড গুরুতর অপরাধ।
নির্বাচন কমিশনের নিকট আমাদের জোর দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। জনগণ যেন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের অনুলিলি পাওয়ার পর, তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।
এতাবস্থায়, বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্োচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি করছে।
রাজধানীর বেইলি রোডে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সংম্মেলনের মাধ্যমে এসব লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের উদ্বোধনী বক্তব্যের পর ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচি- ১. জাতীয় সংলাপ।
২. নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা করা হবে।
৩. নির্বাচনের সময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা পরিদর্শন, বিশেষ করে সিলেটের বালাগঞ্জে যাওয়া হবে যেখানে ঐক্যফ্রন্টের একজন কর্মকে হত্যা করা হয়েছে।
বৈঠক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড.কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম মেম্বার জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।আজকের সভায় স্টিয়ারিং কমিটি নিয়মিত বৈঠক করার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।
ড. কামাল হোসেন, আহ্বায়ক জাতীয়, ঐক্যফ্রন্ট।